নৌকা পোড়ানোর মামলায় আসামি অজ্ঞাত, বিরোধী শিবিরে আতঙ্ক

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন
ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত নৌকা পোড়ানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। আজ রোববার সকালে বাজিতপুর থানায় মামলাটি করেন হুমাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান। মামলায় কারও নাম–পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। ‘অজ্ঞাত আসামিদের’ সংখ্যাও উল্লেখ নেই।

এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে দুই দিন আগে এক জনসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন একে-৪৭–এর ভয় দেখান। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু হুমাইপুরের জনগণের শক্তি নিয়ে ওই দিন আসব না। শুধু একে-৪৭ নয়, প্রয়োজনে যা করা দরকার, সবই করব।’

আওয়ামী লীগ নেতার এমন ঘোষণার দুই দিন পার হতে না হতেই ‘অজ্ঞাত আসামি’ করে মামলার বিষয়ে আতঙ্কিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে ইউনিয়নের দক্ষিণ নামা গোসাইপুর এলাকায় নৌকায় আগুন দেওয়ার ঘটনাটি ঘটে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

আবদুল্লাহ আল মামুন বলে গিয়েছিলেন, শুধু একে-৪৭ ব্যবহার করেই তিনি ক্ষান্ত হবেন না, প্রয়োজনে যা যা করা দরকার, সবই করবেন। মামলাটি ওই যা যা করা দরকারের মধ্যে পড়ে।
জয়নাল আবেদীন খান, চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস), হুমাইপুর ইউপি

নির্বাচনে জয়নাল আবেদীন খান আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। বৃহস্পতিবারের সভা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা মামুন প্রতিপক্ষের যে কজনের নাম উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে জয়নাল খানের নামও রয়েছে। মামলা হওয়ার পর জয়নাল খান বলেন, ঘোষিত ফর্মুলা অনুযায়ী মামলার বাদী তাঁর কাজটি করেছেন। দুই দিন আগে তাঁর নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন বলে গিয়েছিলেন, শুধু একে-৪৭ ব্যবহার করেই তিনি ক্ষান্ত হবেন না, প্রয়োজনে যা যা করা দরকার, সবই করবেন। মামলাটি ওই যা যা করা দরকারের মধ্যে পড়ে।

মামলাটির প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে জয়নাল খান বলেন, এখন মামলা হওয়ার পর এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কর্মী-সমর্থকেরা ভোট চাওয়ার বিপরীতে পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচার চিন্তায় সময় পার করছেন। এই মামলার মাধ্যমে হুমাইপুরে নির্বাচনী পরিবেশের ভারসাম্য হারাবে বলে মনে করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা নিজেদের আড়াল করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও রোববার বিকেলে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে জনসভা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাজিতপুর পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন। তিনি কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সাংসদ আফজাল হোসেনের ছোট ভাই। সভাটি হচ্ছে হুমাইপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা মাঠে। বৃহস্পতিবার একই স্থানে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন প্রতিপক্ষের প্রার্থীদের হুমকি দিয়েছিলেন।

তবে অহেতুক কাউকে হয়রানি কিংবা নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার ভাবনা থেকে মামলা করা হয়নি বলে দাবি আরিফুজ্জামানের। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা। আর রাতের আঁধারে এই নৌকায় আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুন দিয়ে প্রতীক পোড়ানোর প্রতিকার পাওয়ার আমাদের অধিকার রয়েছে। সেই কারণেই মামলাটি করা।’

তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেবল আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে সবার মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করার কিছু নেই।
মাজহারুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), বাজিতপুর থানা

এই ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম, বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের মো. মানিক মিয়া, আনারস প্রতীক নিয়ে জয়নাল আবেদীন খান ও ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নিয়ামত আলী খান।

মানিক মিয়া গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘একে-৪৭–এর ভয় দেখানোর পর মামলা। এখন অপেক্ষা সিনেমার পরের দৃশ্য দেখার। সেটি অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো কিছু হবে না। এই পরিস্থিতিতে আর যা–ই হোক সুষ্ঠু ভোট আশা করা যায় না।’

আরও পড়ুন

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, হুমাইপুরে বিশেষ কিছু ঘটেছে এই তথ্য তাঁর জানা নেই। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। ফোনেও জানায়নি।

বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় অগ্নিসংযোগের (ধারা ৪৩৫) অভিযোগে মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। মামলাটি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের বিষয়ে ওসি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেবল আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে সবার মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করার কিছু নেই।