নৌকায় করে তাঁরা ভোট দিতে আসেন চর থেকে

বগুড়া জেলার মানচিত্র
প্রতীকী ছবি

দুপুর ১২টা। বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার কালিতলাঘাট। প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করে এই ঘাটে দুটি নৌকা আসতে দেখা যায়। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন করে যাত্রী। কথা বলে জানা গেল, তাঁদের সবার বাড়ি চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে। পৌর এলাকার বাসিন্দা না হলেও পৌরসভা নির্বাচনের ভোট দিতে এসেছেন তাঁরা।

এসব নৌকার যাত্রীদের কারা এনেছেন, তা বলতে রাজি হননি কেউ। নৌকা থেকে নামার সময় পাঁচ থেকে ছয়জন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, পৌরসভার ভোটার করা হয়েছে তাঁদের। কিন্তু তাঁরা থাকেন বিভিন্ন চরে। কোন কেন্দ্রে ভোট দিতে যাচ্ছেন জানতে চাইলে তাঁরা আর কথা বলতে রাজি হননি।

কালিতলাঘাটে যাওয়ার আগে পৌরসভার তিনটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেন প্রতিবেদক। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও এসব কেন্দ্রে ভোটারদের বেশ ভিড় দেখা যায়। এই তিনটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল আটটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ করে ভোট পড়ে। কেন্দ্রগুলো হলো সারিয়াকান্দি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, হিন্দুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কেন্দ্রগুলোয় পুরুষদের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক বেশি।

এই পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। সকালে ওই তিনটি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে চার থেকে পাঁচজন ভোটার বলেন, তাঁদের আঙুলের ছাপ মেলেনি। দুপুরের পর তাঁদের আবার কেন্দ্রে যেতে বলেছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। আঙুলের ছাপ না মেলার কারণ হিসেবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বলেছেন, শীতের কারণে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।

এদিকে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ভোট শুরুর দিকেই অভিযোগ তোলেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর শাহী। তিনি বলেন, কিছু কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির হার ‘অস্বাভাবিক’। বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন এনে ভোট নেওয়া হচ্ছে।

তবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান। আর বিএনপির প্রার্থী ছাবিনা ইয়াসমিন বেলা একটার দিকে অভিযোগ করেন, ১, ৪ ও ৭ নম্বর কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা। বিএনপি, আওয়ামী লীগ ছাড়াও পৌরসভাটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী (জগ) আলী আজগর।

সকালে সারিয়াকান্দি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৭১২। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিলন হোসেন বলেন, প্রথম দুই ঘণ্টায় ৪২৭ ভোট পড়ে এই কেন্দ্রে।

হিন্দুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ভোটার ২ হাজার ৫৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ হাজার ১২৪। নারী ৯৩০। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, আড়াই ঘণ্টায় ৫৮৭ ভোট পড়ে। সেই হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় ভোট পড়ে ২৩৪টি করে।

পৌরসভায় নয়টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩১ ও সংরক্ষিত আসনে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ১৪ হাজার ১৫৮ জন।