নৌশ্রমিকদের কর্মবিরতি: ৯৬৭ জাহাজে আটকা ২২ লাখ টন পণ্য

খাদ্য ও জীবনঝুঁকি ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে নৌশ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে। পণ্য নিয়ে কর্ণফুলী নদীতে সারিবদ্ধভাবে অলস পড়ে আছে জাহাজগুলো। এ সময় ক্যারম খেলে সময় কাটান কর্মচারীরা। মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের আনুমাঝির ঘাট এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

নৌশ্রমিকদের কর্মবিরতির তৃতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবারও সারা দেশের নৌপথে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা চলছে। কর্মবিরতির মধ্যে বিদেশ থেকে প্রতিদিন আমদানি পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসা বড় জাহাজও আটকা পড়ছে। এতে আটকা পড়া পণ্যের পরিমাণ বাড়ছে।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৪২টি বড় জাহাজে প্রায় ১০ লাখ টন পণ্য আটকা পড়েছে। বন্দরের বড় জাহাজগুলো থেকে পণ্য নিয়ে সারা দেশের ৩৯টি নৌঘাটে নোঙর করে রাখা ৯২৫টি লাইটার জাহাজে আটকে আছে আরও ১২ লাখ টন পণ্য।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বানে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। নৌশ্রমিকদের খাদ্য ভাতা, ঝুঁকি ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে এই কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। কর্মসূচি শুরুর পর সারা দেশে একযোগে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়।

কর্মবিরতি শুরুর আগে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু দুই পক্ষই অনড় থাকায় কোনো সমাধান হয়নি।

তবে আজ বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান সব পক্ষকে নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।

জানতে চাইলে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতির চাকা বন্ধ করে এমন কর্মসূচি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কারণ কর্মবিরতির কারণে ক্ষতিপূরণ বাবদ যে খরচ বাড়ছে, তার ভুক্তভোগী হবে শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ। ছোট বিষয় নিয়ে দেশের অর্থনীতি বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত করা কোনোভাবেই উচিত নয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে প্রতিদিন ৪০-৫০টি জাহাজ থেকে গড়ে দেড় লাখ টন আমদানি পণ্য খালাস হয়। গত দুই দিনে কোনো পণ্য খালাস না হওয়ায় বন্দরের ওপর চাপ পড়ছে। বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য স্থানান্তরের কার্যক্রম এখন কার্যত অচল হয়ে আছে। তবে জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস স্বাভাবিক আছে। ছোট জাহাজগুলো জেটিতে এনে খালাস করা হয়।

শিপ হ্যান্ডেলিং ও বার্থ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম শামসুজ্জামান রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, কর্মবিরতি অব্যাহত থাকলে লাইটার জাহাজ সংকট তৈরি হবে। বন্দরের বহির্নোঙরেও জাহাজজট তৈরি হবে। এই জট নিরসনে অনেক সময় লাগবে।

এদিকে, কর্মবিরতি চালিয়ে নিতে অনড় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ১১ দফা নৌযানশ্রমিকদের মৌলিক দাবি। মালিকপক্ষ আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি। শ্রমিকেরা কর্মবিরতি কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দাবি মানলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার হয়ে যাবে।

নৌযান মালিকপক্ষের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দর চেয়ারম্যান আজ যে বৈঠক ডেকেছেন, সেখানে সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। আশা করি, সমাধান হবে।’