ন্যায্যমূল্য না পেয়ে সড়কে দুধ ঢেলে দিলেন খামারিরা

নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাহাদিপুর দুধবাজারে শনিবার সকালে ক্রেতা না থাকায় এবং দাম কম হওয়ার বিক্রেতারা সড়কে দুধ ফেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ছবি: প্রথম আলো

ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাহাদিপুর দুধহাটার দুধ বিক্রেতারা শনিবার সকালে তাঁদের দুধ সড়কে ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে তাঁরা চামারি-নাটোর সড়কে দুধ ফেলে দেন। এ সময় তাঁরা সরকারের কাছে দুধ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

বাহাদিপুর দুধহাটায় দুধ বিক্রি করতে আসা কয়েকজন খামারি বলেন, প্রতিদিন তাঁরা দুধ সংগ্রহ করে এই বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। সব মিলিয়ে এখানে অন্তত এক টন দুধের আমদানি হয়। দুধের প্রধান ক্রেতা প্রাণ ও আড়ং ডেইরি। এ ছাড়া আশপাশের শহরের মিষ্টি ও ছানা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। তবে ছুটির দিনে প্রাণ ও আড়ং ডেইরি দুধ কিনতে আসে না। সেদিন দুধের ক্রেতা ও দাম দুটোই কম হয়। নাটোরের আটটি পৌর শহরে স্থানীয়ভাবে লকডাউন থাকায় ও সোমবার থেকে জাতীয়ভাবে লকডাউন শুরুর ঘোষণা থাকায় কয়েক দিন ধরে ক্রেতার সংখ্যা একেবারে কমে গেছে।

কয়েকজন গরুর খামারি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তাঁরা প্রতি কেজি দুধ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে দুধ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ টাকা কেজিতে। শনিবার বেলা ১১টা বেজে গেলেও বাজারে কোনো ক্রেতা না আসায় দুধ বিক্রেতারা বেকায়দায় পড়েন। তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে একযোগে তাঁদের সব দুধ চামারি-নাটোর সড়কে ঢেলে দেন। এ সময় কয়েকজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

আমার বাড়িতে আটটি গাভি আছে। প্রতিদিন এসব গাভি থেকে প্রায় ৪০ কেজি দুধ হয়। দুধ বিক্রি করে পুরো সংসার চলে। অথচ ক্রেতা না থাকায় গত কয়েক দিন মাত্র ২০ টাকা কেজিতে দুধ বিক্রি করতে হয়েছে। এতে গাভি পালনের খরচই হয় না। তাই সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।
সাহিরুল ইসলাম, দুধ বিক্রেতা, কান্দিপাড়া গ্রাম, সিংড়া, নাটোর

দুধ বিক্রেতা কান্দিপাড়া গ্রামের সাহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িতে আটটি গাভি আছে। প্রতিদিন এসব গাভি থেকে প্রায় ৪০ কেজি দুধ হয়। দুধ বিক্রি করে পুরো সংসার চলে। অথচ ক্রেতা না থাকায় গত কয়েক দিন মাত্র ২০ টাকা কেজিতে দুধ বিক্রি করতে হয়েছে। এতে গাভি পালনের খরচই হয় না। তাই সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’

বাহাদিপুরের সাদ্দাম হোসেন বলেন, ৫০ টাকা কেজি গোখাদ্য কিনে ২০ টাকা কেজি দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এখানে দুধ সংরক্ষণের বা প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকলে এমনটা হতো না। তিনি অনতিবিলম্বে এখানে দুধ সংরক্ষণের বা প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খুরশিদ আলম জানান, সিংড়ার কলম, চামারি ও হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নে অনেক খামারি আছেন। এই এলাকার দুধ বিক্রি হয় বাহাদিপুর বাজারে। এখানে বেসরকারিভাবে প্রাণ ও আড়ং ডেইরি দুধ কেনে। তারা শুক্রবার কিংবা অন্যান্য ছুটির দিন দুধ কেনা বন্ধ রাখে। এ জন্য  ইটালী, ডাহিয়া ইউনিয়নে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুধ শীতলীকরণ কেন্দ্র বা ক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদিত হলে দুধ শীতলীকরণ কেন্দ্র বা ক্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।