নয় বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর-ভাওড়া-কামারপাড়া রাস্তা উঁচুসহ সম্প্রসারণ, পাকাকরণ কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার। এতে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত শনিবার সড়কের ভাওড়া ফতেপুর এলাকা
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে ভাওড়া-কামারপাড়া সড়কটি দীর্ঘ প্রায় ৯ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

সড়কটি পাকাকরণ ও সম্প্রসারণের জন্য দুই দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দ্বিতীয়বার নিযুক্ত ঠিকাদার কাজ ফেলে রাখায় তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সুপারিশসহ প্রকল্প কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মির্জাপুর কার্যালয় ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে কামারপাড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তায় মির্জাপুরের ভাওড়া, বহুরিয়া, ওয়ার্শী ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ঢাকার ধামরাই, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার লোকজন চলাচল করেন। প্রায় ৯ বছর আগে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে মির্জাপুর এলজিইডি থেকে রাস্তাটির ভাওড়া খানপাড়া বাজার পর্যন্ত পাকাকরণের কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়।

কাজ পান ঠিকাদার আবদুল জলিল সরকার। খানপাড়া বাজার থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৬৮ লাখ টাকার কাজ পান আলিফ ট্রেডার্স। আলিফ ট্রেডার্স কাজ শেষ করলেও জলিল সরকার প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় খোঁড়াখুঁড়িসহ মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ করে ফেলে রাখেন। এতে আলিফ ট্রেডার্সের শেষ করা কাজের সুফল পাননি এলাকাবাসী। এদিকে সড়কটির ধারণক্ষমতার চেয়ে ভারী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকে। এতে ফেলে রাখা অংশের অধিকাংশ স্থানই দেবে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় রাস্তাটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এদিকে কাজ ফেলে রাখায় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সাড়ে তিন বছর আগে জলিল সরকারের কাজের জামানত বাবদ প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করে। পরে এলজিইডি থেকে বন্যা–পরবর্তী পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় রাস্তাটির কামারপাড়া পর্যন্ত উঁচুসহ সম্প্রসারণ, পাকাকরণের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে কাজটি পায় টাঙ্গাইলের অবনী এন্টারপ্রাইজ। প্রায় চার কোটি টাকার কাজটি এ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গত বছরের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় বছর পরও কাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদার গত ফেব্রুয়ারিতে সড়কের দুই পাশে থাকা ধানখেত থেকে প্রায় সাত ফুট গভীর করে এক্সাভেটর দিয়ে মাটি কেটে রাস্তার দুইপাশে ফেলেন। এরপর ভাওড়া ফতেপুর বাজার পর্যন্ত কিছু স্থানে খোয়া আর বালু ফেলে কাজ বন্ধ করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার অধিকাংশ স্থানই দেবে যাওয়া। যা এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত গভীর। কোনো কোনো স্থানে ইট বিছানো। রাস্তার ওপরে থাকা আগের কার্পেটিং উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভাওড়া ফতেপুর বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী সামাদ মিয়া (৫৯) বলেন, ‘কয় বছর ধরে একবার ইট ফালায়, আবার বৃষ্টিতে তা ভাঙে। ঠিকাদার কাজ করে, আবার বন্ধ করে। মনে হয় কারও দায়িত্ব নাই।’

সড়কটিতে নিয়মিত চলাচলকারী পিকআপচালক জুয়েল মিয়া (২৫) বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। পুরাডাই খারাপ। কি বলমু। যাওয়া-আসায় কষ্ট। আমাগো ঝুঁকি লগেই থাকে।’

স্থানীয় লোকজন জানান, আগে কাঁচা রাস্তাতে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার যানবাহন চলত। কিন্তু রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরুর পর ৯ বছর ধরে তাঁরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অবনী এন্টারপ্রাইজেন মালিক মো. হেকমত আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

মির্জাপুর এলজিইডি কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, মেয়াদ বৃদ্ধিসহ চলতি অর্থবছরের জুনের মধ্যে রাস্তাটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ করে তা ফেলে রেখেছেন। কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে কয়েক দফা চিঠি দিলেও লাভ হয়নি। এক মাস আগে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে জামানত বাজেয়াপ্ত পূর্বক পুনরায় দরপত্র প্রক্রিয়ায় যেতে প্রকল্প কার্যালয়ে সুপারিশসহ চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে আগের ঠিকাদার দ্বারা কাজ করানো সম্ভব না হলে পুনরায় প্রাক্কলন প্রস্তুত করে প্রকল্প কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।