পঞ্চগড়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচারের অভিযোগে ১১ হাজার কেজি চা জব্দ

পঞ্চগড় সদর উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচারের অভিযোগে ১১ হাজার কেজি চা জব্দ করেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। পরে জব্দ করা চা ও ওই চা বহনকারী পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়।
ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়ের একটি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানার ১১ হাজার কেজি চা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচারের সময় জব্দ করেছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার খালপাড়া এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানের গুদামের সামনে ট্রাক থেকে নামানোর সময় এসব চা জব্দ করা হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন রাজস্ব কর্মকর্তাদের চা বহনকারী ট্রাকসহ অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে এবং চা বহনকারী ট্রাক থানায় নিয়ে যায়।

পঞ্চগড় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সার্কেল সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়র সদর উপজেলার কেচেরাপাড়া এলাকায় অবস্থিত উত্তরা গ্রিন টি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামের ওই চা প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদের কাছ থেকে কাঁচা চা-পাতা কিনে চা উৎপাদন করে। নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চগড়ের চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলোতে উৎপাদিত তৈরি চা চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের নিলাম বাজারে বিক্রি হয়।

মঙ্গলবার ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রায় ১১ হাজার কেজি চা চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউসের নিলাম বাজারে পাঠানোর জন্য পঞ্চগড় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট সার্কেলে আবেদন করে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ট্রাকে করে ১১ হাজার কেজি চা চট্টগ্রাম নিলাম বাজারে না নিয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের খালপাড়া এলাকায় আল আমিন ব্ল্যাক টি হাউসের গুদামের সামনে নিয়ে ট্রাক থেকে নামাতে থাকে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজস্ব কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে চা-বোঝাই ট্রাকটি আটক করেন। জব্দ করা চায়ের দাম ২০ লাখ টাকা হবে বলে জানা গেছে।

তবে উত্তরা গ্রিন টি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের অন্যতম পরিচালক আবদুর রাজ্জাক রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চা বিক্রি বা পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা পঞ্চগড় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সার্কেলের কাছে চট্টগ্রাম নিলাম বাজারে দুটি গাড়িতে করে চা বিক্রির জন্য আবেদন করেছিলাম। এর মধ্যে একটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি খোলা ট্রাক ছিল। রাতে খোলা ট্রাকটিতে সামান্য সমস্যা দেখা দেওয়ায় এবং বৃষ্টির কারণে চা-বোঝাই ট্রাকটি জগদল বাজারের দিকে যায়। সেখানে খারাপ কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। পরে জেনেছি  রাজস্ব কর্মকর্তারা চা-বোঝাই ট্রাকটি নিয়ে গেছেন।’

তবে এ বিষয়ে পঞ্চগড় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘উত্তরা গ্রিন টি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামের কারখানাটি চট্টগ্রাম নিলাম বাজারে চা নিয়ে যাওয়ার আবেদন করে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিয়ম অনুযায়ী ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে ওই চা চট্টগ্রামে না নিয়ে কারখানা থেকে রাতের বেলা উল্টোদিকে জগদল-খালপাড়া এলাকায় নিয়ে স্থানীয় আল আমিন ব্ল্যাক টি হাউসের সামনে ট্রাক থেকে চা আনলোড করতে থাকে। পরে আমরা খবর পেয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চা পাচারের অপরাধে চাসহ ট্রাকটি জব্দ করি।’

রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মিয়া আরও বলেন, ‘চা জব্দ করার সময় কিছু লোক আমাদের বাধা দেয়। পরে ট্রাকটি নিয়ে পঞ্চগড় শহরের দিকে যাওয়ার পথে তিনমাইল এলাকায় আরেক দল লোক আমাদের বাধা দেয় এবং ট্রাকসহ আমাদের এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে পুলিশের সহযোগিতায় আমরা চা-বোঝাই ট্রাকটি পঞ্চগড় সদর থানায় নিয়ে যাই। এ বিষয়ে রংপুর কাস্টমস কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত পেলেই এই চায়ের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আককাস আহমদ বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জব্দ করা ১১ হাজার কেজি চা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।