পঞ্চগড়ের আলু রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়ায়

পঞ্চগড়ে উৎপাদিত আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানির জন্য গত মঙ্গলবার ট্রাকে তোলা হয়
ছবি: সংগৃহীত

চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পঞ্চগড়ে উৎপাদিত আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি শুরু করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার প্রথম দফায় পঞ্চগড়ে উৎপাদিত ডায়মন্ড জাতের ২৮ মেট্রিক টন আলু মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে।

পঞ্চগড় বিএডিসি হিমাগারের ব্যবস্থাপনায় প্রতি কেজি ১৪ টাকা দরে প্রতি ব্যাগে সাড়ে ৮ কেজি করে আলু প্যাকেটজাত করে পাঠানো হচ্ছে। যার একেকটি আলুর ওজন ৯০ গ্রামের ওপরে ও ২০০ গ্রামের মধ্যে। এবার পঞ্চগড় থেকে পর্যায়ক্রমে ৫০০ মেট্রিক টন আলু বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে পঞ্চগড় বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মানসম্মত বীজ আলু উৎপাদন, সংরক্ষণ ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাধ্যমে উৎপাদিত ডায়মন্ড জাতের আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করছে সরকার। বাংলাদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কে এস ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চিন হুয়াত ট্রেডিং এসব আলু চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে, যা থেকে আলু উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পঞ্চগড় বিএডিসি হিমাগারের আওতায় এবার জেলায় ৩০০ একর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে, যা থেকে প্রায় ১ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। যার মধ্যে রপ্তানিযোগ্য ডায়মন্ড জাতের আলুর চাষ হয়েছে ২০ একর এবং রপ্তানিযোগ্য অন্যান্য জাতের আলুর চাষ হয়েছে ৩০ একর জমিতে।

পঞ্চগড়ে উৎপাদিত আলু ভালো দামে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি শুরু হওয়ায় খুশি হয়েছেন কৃষকেরা। প্রতি মৌসুমে আলুর দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচ ওঠানোই কঠিন হয়ে যায় চাষিদের। এভাবে তাঁদের উৎপাদিত আলু বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা হলে আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃষকেরা বলছেন, ডায়মন্ড জাতের রপ্তানিযোগ্য আলু চাষের জন্য পঞ্চগড় বিএডিসি হিমাগার থেকে তাঁদের মানসম্মত বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন। প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে তাঁরা অনেক উপকৃত হয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, প্রতি বিঘা ডায়মন্ড আলু চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৩৩ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ মণ, যা থেকে প্রতি বিঘায় আলু বিক্রি হবে ৬০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকার। প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে গড় ব্যয় প্রায় ১১ টাকা থেকে ১২ টাকা।

১১ একর জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ করেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের তহশিলদার পাড়া এলাকার কৃষক আব্দুল মতিন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ১১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৩ হাজার মণ আলুর আশা করছেন তিনি। আব্দুল মতিন বলেন, উৎপাদিত আলু তিন ভাগে বাছাই করেছেন। এক ভাগ রপ্তানির জন্য, এক ভাগ বীজের জন্য ও আরেক ভাগ স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ায় রপ্তানিযোগ্য ১৮ মেট্রিক টন আলু তিনি বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ১৪ টাকা দরে।

পঞ্চগড়ের মাটি ও আবহাওয়া আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে আলু চাষ ভালো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পঞ্চগড় বিএডিসি হিমাগারের উপপরিচালক মো. আব্দুল হাই। তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে উৎপাদিত ডায়মন্ড জাতের আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানিকারকেরা খুব বেশি পছন্দ করেছেন। এভাবে সরকারি উদ্যোগে আলু বিদেশে রপ্তানি করা গেলে কৃষকেরা অনেক বেশি লাভবান হবেন। ভবিষ্যতে রপ্তানিকারকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।