পটুয়াখালীতে সাংসদের বিরুদ্ধে বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ

পটুয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মহিব্বুর রহমানের বিরুদ্ধে বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ করেছেন কলাপাড়ার ধুলাশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামান খলিফার ছেলে কেএম মেহেদী হাসান ও মেয়ে জিনিয়া জেসমিন নিপা। আজ রোববার পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে।
ছবি: প্রথম আলৌ

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাংসদ মো. মহিব্বুর রহমানের বিরুদ্ধে কলাপাড়ার ধুলাশ্বর ইউনিয়নে বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন ধুলাশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত কে এম খালেকুজ্জামান খলিফার ছেলে কে এম মেহেদী হাসান ও মেয়ে জিনিয়া জেসমিন নিপা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য মেহেদী হাসান বলেন, তাঁর বাবা ধুলাশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম খালেকুজ্জামান ওরফে জামান খলিফা ২০২০ সালের ১১ জুলাই মারা যান। তিনি ২০০৩ সালের ১০ নভেম্বর আদম আলীর কাছ থেকে সাব কবলা দলিল মূলে ৩৬৬ নম্বর খতিয়ানের জেএল ৩২ নম্বর ধরাশ্বর মৌজার ২ দশমিক ৩৭ একর জমি কিনে ভোগদখল করে আসছিলেন। ওই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বর্তমান সাংসদ মো. মহিব্বুর রহমান একই জমির আরও একটি সাব কবলা দলিল দেখিয়ে ৩৫৭ নম্বর নামের আরেকটি খতিয়ান সৃষ্টি করেন।
তবে এই খতিয়ান ভুয়া দাবি করে তা বাতিলের জন্য জামান খলিফা পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) ২০০৪ সালের ২৫ জুলাই একটি মোকদ্দমা করলে মহিব্বুর রহমানের খতিয়ানটি বাতিল করা হয়।

এ বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে মহিব্বুর রহমান কলাপাড়া সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করলে আদালত তা খারিজ করে দেন। পরে মহিব্বুর রহমান জেলা জজ আদালতের শরণাপন্ন হলে সেখানেও তাঁর মামলাটি খারিজ করা হয়।

এরপর ২০০৫ সালের ৯ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিভিশন মামলা করলে আদালত তাঁর মামলাটি গ্রহণ করে নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করেন। পরে হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে সিভিল আপিল মোকদ্দমা মঞ্জুর করে উভয় পক্ষকে বিরোধপূর্ণ জমির অবস্থান এবং আকার-আকৃতির বিষয়ে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জামান খলিফার ছেলে মেহেদি হাসান আরও বলেন, ওই জমির ওপর সুপ্রিম কোর্টের স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনা থাকলেও মহিব্বুর রহমান তা মানছেন না। তিনি স্থানীয় সাংসদ হওয়ায় তাঁর কাছে এই বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থাপনা নির্মাণে আপত্তি দিলেও তা তিনি শুনছেন না। এই অবস্থায় এর প্রতিকার চেয়ে তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন।  

আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে পটুয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মো. মহিব্বুর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি যেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করছি, সেই জমির ওপর উচ্চ আদালতের কোনো নির্দেশনা নেই। ওই জমি শামসুন্নাহার নামের একজনের ছিল। ২০১৫ সালের ১১ মার্চ আমি তাঁর কাছ থেকে ৬০ শতাংশ জমি কিনি। বর্তমানে ক্রয়কৃত সে জমির ওপরই অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে।’

স্থানীয় সাংসদ আরও বলেন, ‘এই জমি ছাড়াও আমি আদম আলী নামের একজনের  ওয়ারিশদের কাছ থেকে ৩ একর জমি কিনেছি। এ জমিও আমি বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রয় করেছি। তবে জামান খলিফা ওই আদম আলীর নামে একই কবুলিয়ত ও সেটেলমেন্ট কেসের ওপর দ্বিতীয়বার আলাদা আরেকটি এসএ খতিয়ান সৃষ্টি করে ৩ একর জমি কিনেছেন। জামান খলিফা ভুয়া ওয়ারিশ বের করে এ কাজ করেছেন। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার কৌশল নিয়ে জামান খলিফার পরিবারের সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ এনেছেন, যার একটুও সত্যতা নেই।’