পদ্মা সেতুর ৫ হাজার ২৫০ মিটার এখন দৃশ্যমান

পদ্মা সেতুতে শনিবার বসেছে ৩৫তম স্প্যান। এখন সেতুর ৫ হাজার ২৫০ মিটার দৃশ্যমানছবি: সংগৃহীত

পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৮ ও ৯ নম্বর পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয়েছে ৩৫তম স্প্যান। এর ফলে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৫ হাজার ২৫০ মিটার। শনিবার বেলা দুইটা ৪০ মিনিটের দিকে স্প্যানটি সফলভাবে বসানো হয়।

৩৪তম স্প্যানটি বসানোর ৭ দিনের মাথায় এই স্প্যান বসানো হলো। সেতুতে আর মাত্র ৬টি স্প্যান বসানো বাকি রইল। গত ২৫ অক্টোবর ৩৪তম স্প্যানটি বসানো হয়েছিল।

সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার টু-বি স্প্যানটি সেতুর ৮ ও ৯ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানোর কথা ছিল। পিলারের কাছে পানির গভীরতা কমে নাব্যতা সংকট তৈরি হওয়ায় স্প্যানটি ওই দিন বসানো যায়নি। শুক্রবার খননকাজ শেষ করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়।

সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের প্রথম আলোকে জানান, খননের মাধ্যমে পলি সরিয়ে নদীতে নাব্যতা বাড়ানো হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টার দিকে মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটিকে নিয়ে রওনা হয়। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে স্প্যানটিকে সফলভাবে বসানো হয়। আগামী ৫ অথবা ৬ নভেম্বর পরবর্তী স্প্যান বসানো হবে। বাকি স্প্যানগুলো ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে বসানোর পরিকল্পনা আছে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫ অথবা ৬ নভেম্বর ২ ও ৩ নম্বর খুঁটিতে ৩৬তম স্প্যান (স্প্যান ১-বি), ১১ নভেম্বর ৯ ও ১০ নম্বর খুঁটিতে ৩৭তম স্প্যান (স্প্যান ২-সি), ১৬ নভেম্বর ১ ও ২ নম্বর খুঁটিতে ৩৮তম স্প্যান (স্প্যান ১-এ), ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটিতে ৩৯তম স্প্যান (স্প্যান ২-ডি), ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বর খুঁটিতে ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) এবং আগামী ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর ৪১ নম্বর স্প্যানটি (স্প্যান ২-এফ) বসানোর কথা আছে। সবগুলো স্প্যান মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আছে।

পদ্মা সেতুতে শনিবার বসেছে ৩৫তম স্প্যান
ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এর মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, ১ হাজার ৪১টির বেশি রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১ হাজার ৫০০টির বেশি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয়েছে ৩৪টি স্প্যান। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৫৫ ভাগ। নদী শাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৫০ ভাগ। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৯৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।