পদ্মা সেতু–শরীয়তপুর সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজের নেই অগ্রগতি

পদ্মা সেতু-শরীয়তপুর দুই লেনের এ সড়কের নির্মাণকাজ শুরুর কথা ছিল দুই বছর আগে। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগে আগে গত ৪ জুন সড়কের একটি অংশের কাজ শুরু হয়। শহরের ফায়ার সার্ভিসের সামনেছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতু-শরীয়তপুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ আজ বৃহস্পতিবার শেষ হলেও গত দুই বছরেও কাজের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। এতে খানাখন্দে ভরা সরু সড়ক দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের। প্রকল্পের এমন অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুজন সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর নাওডোবা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের জন্য ২০২০ সালের মার্চে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। আর এর নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য সময় দেওয়া হয় চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।

তবে সওজের একটি সূত্র জানায়, ৪ জুন শরীয়তপুর শহর থেকে দেড় কিলোমিটার অংশের কাজ শুরু করা হয়েছে। চার লেনের জন্য এ সড়কের জমি অধিগ্রহণ করা হলেও বর্তমানে ৩৩ ফুট প্রশস্ত দুই লেন নির্মাণ করা হবে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ২৬ জুন থেকে শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকায় বাস চলাচল শুরু করা হয়। বর্তমানে সরু সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা। কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সড়কটির বেহাল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন দ্রুত সড়কটি নির্মাণের দাবি জানিয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন। এ ছাড়া শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম গতকাল জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় একই দাবি জানান।

প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় চলে গেছে। তাই মেয়াদের মধ্যে সড়কটি নির্মাণ করা যায়নি।

শরীয়তপুর সওজ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জাজিরার নাওডোবা প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা অতিক্রম করে সাড়ে ১০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক দিয়ে যানবাহন শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠবে। সংযোগ সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য প্রশস্ত কোনো সড়ক নেই।

পদ্মা সেতুতে যাতায়াতের জন্য জেলা শহর পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণে ২০১৯ সালে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দেন সংসদ সদস্য এনামুল হক (শামীম) ও ইকবাল হোসেন (অপু)। ২০২০ সালের মার্চে প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর শরীয়তপুর সওজ ও জেলা প্রশাসন চার লেন সড়ক নির্মাণের জন্য ১০৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে।

ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের বাসচালক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু থেকে নেমে শরীয়তপুর সড়কে এলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। ১২ ফুট চওড়া সড়ক—তা–ও আবার খানাখন্দে ভরা। সেটা দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। এত দীর্ঘ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়ে গেল, অথচ এই সড়কটির কাজ শুরুই হলো না।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে নাওডোবা আন্ডারপাস থেকে বিকেনগড় পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকার জমি সওজকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সওজ ওই অংশে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেনি। তারা জেলা শহরের ফায়ার সার্ভিস থেকে জাজিরা টিঅ্যান্ডটি মোড় পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশের কার্যাদেশ দিয়েছে। ৪ জুন থেকে ওই অংশের ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রেমতলা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত যেতে হয় একটি সরু সড়ক দিয়ে। তাই সড়কটি ফোর লেন করার জন্য তিন বছর আগে ডিও লেটার দেওয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সড়কটির নির্মাণকাজের জন্য আমরা অনেকবার তাগিদ দিয়েছি, কিন্তু কোনো অগ্রতি নেই। বুধবার আমাকে শহরে আসতে ৩০-৪০ মিনিট যানজটে বসে থাকতে হয়েছে। সওজকে অনুরোধ করছি, দ্রুততম সময়ে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করা জন্য।’

আরও পড়ুন

শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সংযোগস্থল শরীয়তপুরে। অথচ জেলা শহরে আসার সড়ক নির্মাণের কোনো তাগিদ কেউ অনুভব করেননি। আমরা তিনজন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানালে তিনি দ্রুত সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দেন। সেতু চালু হয়েছে—কিন্তু সড়কের কোনো অগ্রগতি নেই। বাধ্য হয়ে আমাকে সংসদের বাজেট বক্তৃতায় সড়কটি দ্রুত নির্মাণের আবেদন জানাতে হয়েছে।’

সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসমাউল হুসনা (লিজা)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সওজকে নাওডোবা অংশের কিছু জমি বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা চাইলে ওই অংশে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারত। কিন্তু তা সওজ করেনি। এ ছাড়া বারবার সড়কের এলাইনমেন্ট সংশোধন করে ও নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ টাকা কর্তন করে রাখার শর্ত জুড়ে দিয়ে অন্তত ৬ মাস সময় নষ্ট করেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সওজের শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া দরপত্র প্রক্রিয়া করতে কিছু সময় চলে গেছে। তাই মেয়াদের মধ্যে সড়কটি নির্মাণ করা যায়নি। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।