পদ্মার দুর্গম চরে বিদ্যুৎ পাবে ১৯ হাজার পরিবার

পদ্মা নদীর দুর্গম চর নওপাড়া এলাকায় ১০ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের সাবস্টেশন উদ্বোধন করেছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। আজ শনিবার নড়িয়ার নওপাড়া এলাকায় এর উদ্বোধন হয়
ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা নদীর দুর্গম চরে ১৯ হাজার পরিবার পাবে বিদ্যুৎ। ৬টি উপজেলার ৫০টি গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মার দুর্গম চর নওপাড়া এলাকায় ১০ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার পরিবার বিদ্যুতের সংযোগ পেয়েছে।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ সরদার, নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মোবারক উল্লাহ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হেকিম, নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব, নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ আজগর সোহেল প্রমুখ।


মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ; চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তর ও মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ৫০টি গ্রাম পদ্মা নদীর কারণে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এসব গ্রামে একমাত্র নদীপথে যাতায়াত করতে হয়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এসব চরে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালে চরগুলোতে পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চরগুলোতে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন তৈরির কাজ শুরু করে। আর পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে চার কিলোমিটার সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়। ৪০০ কিলোমিটার ১১ কেভি ও ১৮ কিলোমিটার ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন টানা হয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে নওপাড়ায় ১০ এমভিএ ক্ষমতার উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই উপকেন্দ্র থেকে ১৯ হাজার পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এটি নির্মাণের জন্য নওপাড়া ও চরআত্রার মুন্সি পরিবারের সাত ব্যক্তি তিন একর জমি দান করেছেন।

মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি পদ্মার চরের সাড়ে ছয় হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এনেছে। আর বিদ্যুতের এই উপকেন্দ্র উদ্বোধনের ফলে এখন ১৯ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে।

নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ আজগর সোহেল বলেন, ‘পদ্মা নদীর এ দুর্গম চরে কোনো দিন বিদ্যুৎ পাব, তা কল্পনাও করতে পারিনি। এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকা কৃষি ও মাছের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ায় এখন কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে।’

চরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা মোটেও স্বাভাবিক কাজ ছিল না বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ সরদার। তিনি আরও বলেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর তৎপরতায় সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে চরে বিদ্যুৎ আনা সম্ভব হয়েছে।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ৭০ বছরের পুরোনো চর নানা দিক থেকে অবহেলিত ছিল। উন্নয়নের প্রধান সোপান বিদ্যুৎ, চরবাসী আজ বিদ্যুৎ পেয়েছে। চরের সব বাসিন্দা যাতে বিদ্যুৎসুবিধা পায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।