পদ্মায় পড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসচালকের পরিচয় মিলেছে, খোঁজ মেলেনি

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীতে পড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসটি পরে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো মানুষ ছিল না।
এম রাশেদুল হক

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে ফেরিঘাটে পন্টুন ছিঁড়ে নদীতে পড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসচালকের পরিচয় মিলেছে। তবে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি।

দৌলতদিয়া ঘাটে নিখোঁজ ওই মাইক্রোবাসচালকের নাম মারুফ হোসেন (৪০)। তিনি ঢাকার হাতিরঝিল এলাকায় থাকেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেট সদরে।

মাইক্রোবাসের মালিক মোকসেদুর রহমান। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সোমবার রাতে তাঁর শ্যালক মিজানুর রহমানকে গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা নামিয়ে আজ সকালে চালক গাড়ি নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন গাড়িটি কিনেছেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ-১৪-২৬০৮) ঘাটে অপেক্ষমাণ ইউটিলিটি (ছোট) মাধবীলতা ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় ছিল। এ সময় হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে প্রচণ্ড বাতাসে পন্টুনের তার ছিঁড়ে ঘাট থেকে প্রায় ৩৫০ মিটার দূর নদীতে চলে যায়। এ সময় পন্টুনের র‌্যাম থেকে মাইক্রোবাসটি পদ্মা নদীতে পড়ে যায়। খবর পেয়ে গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস ও পাটুরিয়ার ডুবুরি দল মাইক্রোবাসের সন্ধান পায়। উদ্ধারকারী জাহাজ এসে বেলা পৌনে দুইটার দিকে মাইক্রোবাস টেনে তোলে। কিন্তু তাতে কোনো মানুষ ছিল না।

ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র জাহিদ হাসান ঈদ করতে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে ফেরির পন্টুনে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা রঙের মাইক্রোবাসটি পদ্মায় পড়ে মাত্র দুই মিনিটে চোখের পলকে ডুবে যায়। দূর থেকে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।

আরও পড়ুন

সরেজমিন দেখা যায়, দুর্ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লোকজন উপস্থিত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘাট থেকে প্রায় ৩৫০ মিটার দূরে নদীতে মাইক্রোবাসটির সন্ধান পায়। তার পাশেই ছিল ঘাট থেকে ছিঁড়ে যাওয়া পন্টুনসহ ফেরি মাধবীলতা। উদ্ধারকারী জাহাজ এসে মাইক্রোবাসটি বেলা পৌনে দুইটার দিকে উদ্ধার করে।

হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে পন্টুন থেকে মাইক্রোবাস পড়ে নদীতে চলে যায়। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার তৎপরতা
এম রাশেদুল হক

উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দেন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার। সঙ্গে ছিলেন রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক, সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল তায়াবীর, দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আবদুল মোন্নাফ আলী।

আরও পড়ুন

প্রত্যক্ষদর্শী ৫ নম্বর ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লা বলেন, ‘ঝড়ের সময় আড়তে বসে ছিলাম। হঠাৎ ঝড় শুরু হলে ঘাটের পন্টুনে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রচণ্ড বাতাসে ঘাট থেকে তার ছিঁড়ে পন্টুনটি বহুদূরে চলে যায়। সঙ্গে মাইক্রোবাসটিও পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যায়। পানিতে পড়ার পর চালক জানালা দিয়ে মাথা ও হাত বের করে ডাকাডাকি করতেই মাইক্রোবাস পানিতে তলিয়ে যায়। চালক গাড়ি থেকে বের হতে পেরেছেন কি না, তা বলতে পারছি না।’

গাড়িটা উদ্ধার করা গেলেও গাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলেছেন গাড়িতে লোক ছিল। কিন্তু আমরা গাড়িতে কাউকে পাইনি। তবে চালকের সন্ধানে আমাদের ডুবুরি দল কাজ অব্যাহত রেখেছে।
আনোয়ার হোসেন, সহকারী পরিচালক, রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন

বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার বলেন, বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঝড় শুরু হয়। মুহূর্তেই বড় ঝড় হলে মোটা ছয়-সাতটি তারে বেঁধে রাখা পন্টুনটি ঘাট থেকে ৩৫০ মিটার দূরে পদ্মা নদীতে চলে যায়। পন্টুনের সঙ্গে ছিল ছোট ফেরি মাধবীলতা ও রজনীগন্ধা। ফেরি দুটিও পন্টুনের সঙ্গে মাঝনদীতে চলে যায়। ফেরিতে ওঠার আগমুহূর্তে পন্টুনে দাঁড়ানো মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, মাইক্রোবাসে শুধু চালক ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, পানিতে ডুবে গেলে চালক হয়তোবা গাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন। তবে তাঁকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। তাৎক্ষণিক খোঁজখবর নিই। পাটুরিয়া থেকে ডুবুরি দল এসে কাজ শুরু করে। গাড়িটা উদ্ধার করা গেলেও গাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলেছেন গাড়িতে লোক ছিল। কিন্তু আমরা গাড়িতে কাউকে পাইনি। তবে চালকের সন্ধানে আমাদের ডুবুরি দল কাজ অব্যাহত রেখেছে।’

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. ফিরোজ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ৫ নম্বর ঘাট দিয়ে ফেরিতে যানবাহন পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলে এবং মেরামত সম্পন্ন হলে ঘাট চালু করা হবে।

আরও পড়ুন