পদ্মায় বিলীনের পথে গুচ্ছগ্রাম, সরে যাচ্ছে বাসিন্দারা

ভাঙনের কবলে আশ্রয়ণ প্রকল্প করপারা গুচ্ছগ্রাম। কুন্ডেরচর ইউনিয়ন, জাজিরা, শরীয়তপুর, ৯ আগস্ট। ছবি: সংগৃহীত
ভাঙনের কবলে আশ্রয়ণ প্রকল্প করপারা গুচ্ছগ্রাম। কুন্ডেরচর ইউনিয়ন, জাজিরা, শরীয়তপুর, ৯ আগস্ট। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের সিডারচর এলাকায় করপারা গুচ্ছগ্রামটি পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। ১৫ দিনে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ৪০ শতাংশ জায়গা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন-আতঙ্কে গুচ্ছগ্রামটির বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে। তবে ভাঙন রোধে ৩৩০ মিটার জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জাজিরা উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাজিরার বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন ছিল। ওই সময় কুন্ডেরচর ইউনিয়নের অন্তত দুই হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য পদ্মা নদীর চরে করপারা গুচ্ছগ্রাম নামে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে স্থানীয় প্রশাসন। চার একর জমির ওপর ২০১৮ সালে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। সেখানে ৬০টি পরিবারকে বসতঘর, নলকূপ ও টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভাঙনকবলিত আরও ৫০টি পরিবার আশ্রয় নেয়। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্প ভাঙনের কবলে পড়ে। ফলে গত দুই সপ্তাহে প্রকল্পটির ৪০ শতাংশ জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। গুচ্ছগ্রামের ৫৫টি পরিবার ও অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া অপর ৫০টি পরিবার নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে পাউবো ৩৩০ মিটার অংশ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে। গত ৩০ জুলাই থেকে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ১১০ মিটার অংশে সাড়ে ছয় হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর এলাকায় বাড়ি ছিল ধলু সরদারের। ২০১৭ সালে তাঁর বসতবাড়ি ও কৃষিজমি পদ্মায় বিলীন হয়। তিনি কোথায়ও আশ্রয় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে করপারা গুচ্ছগ্রামে ওঠেন। সেখানেই অস্থায়ী ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। গুচ্ছগ্রাম ভাঙন শুরু হলে আতঙ্কিত হয়ে তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিলাশপুর এলাকায় চলে যান। ধলু সরদার বলেন, ‘নদীভাঙন আমাদের পিছু ছাড়ছেই না। এ পর্যন্ত তিন দফা ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়েছি। সর্বশেষ আশ্রয়টুকুও হারালাম। এখন কোথায় যাব আল্লাহই জানে।’

কুন্ডেরচরের কালু ব্যাপারীকান্দি গ্রামে বাড়ি ছিল মোহাম্মদ ফরাজি ও আলম সরদারের। ২০১৮ সালের ভাঙনে তাঁদের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। আশ্রয়হীন হয়ে তাঁরা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা হয়েছেন। সেই গুচ্ছগ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।

মোহাম্মদ ফরাজি ও আলম সরদার জানান, গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা হয়ে তাঁরা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলেন। সেই গুচ্ছগ্রাম এখন ভাঙনের কবলে পড়ায় তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অন্যরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও কোনো বিকল্প না থাকায় তাঁরা এখনো গুচ্ছগ্রামে রয়েছেন। ততে তাঁরা ভাঙন ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

কুন্ডেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ব্যাপারী বলেন, পদ্মার ভাঙনে আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ৪০ শতাংশ বিলীন হয়ে গেছে। আতঙ্কে সেখানকার বাসিন্দারা চলে গেছে। পাঁচটি পরিবার এখনো সেখানে রয়েছে, তারা ওই আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশ্রফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙনকবলিতদের কোথাও আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হয়নি। বন্যার জন্য খোলা আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা ও নগদ তিন হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।

শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মার চরের আশ্রয়ণ প্রকল্পটি রক্ষা করার জন্য বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে গুচ্ছগ্রামটি রক্ষা করার জন্য। পদ্মার পানি কমতে থাকলে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে পারে।