পদ্মায় ভাসল চারটি ‘ভ্রমণতরি’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পদ্মায় ভাসানো হয়েছে চারটি ট্রলার। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভ্রমণতরি’। সোমবার সকালে শিবচরের বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

স্বপ্নের পদ্ম সেতু এখন প্রায় বাস্তব। তাই এই সেতুকে দুচোখ ভরে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে পদ্মার দুই পারে ছুটে আসছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। ছোট ছোট ট্রলার ও নৌকা ভাড়া করে পুরো সেতুটি তাঁরা ঘুরে দেখছেন।

দর্শনার্থীদের এই ভ্রমণকে আরামদায়ক করতে ও পদ্মার চরাঞ্চলকে পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পদ্মায় ভাসানো হয়েছে চারটি ট্রলার। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভ্রমণতরি’।

লাল-সবুজ রঙের চারটি বিশেষ ট্রলার পদ্মা সেতু দেখতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে; যা সোমবার সকালে শিবচরের বাংলাবাজার ফেরিঘাট থেকে উদ্বোধন করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর-১ আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জেলা প্রশাসনের উদ্ভাবন, জেলে নৌকায় পর্যটন’।

জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, স্বপ্নের পদ্ম সেতুর কর্মযজ্ঞ শুরু হওয়ার সময় থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে আসতেন ভ্রমণপ্রেমীরা। স্প্যান ওঠানোর পর থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে। সর্বশেষ স্প্যান ওঠানোর পরে পদ্মা সেতু এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। তাই ভ্রমণপিপাসুরা প্রতিদিন পদ্মা সেতু এলাকায় ভিড় করেন। দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে আরামদায়ক করতে, পদ্মা নদী ও চরাঞ্চলকে পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পদ্মা নদীতে ‘ভ্রমণতরি’ নামে চারটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নামানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নদীতে ২০টি ট্রলার নামানো হবে। ট্রলার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টাপ্রতি ১ হাজার টাকা। এসব ভ্রমণতরিতে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী উঠতে পারবেন।

পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভ্রমণের সুবিধার জন্য পদ্মায় ভাসানো হয়েছে চারটি ‘ভ্রমণতরি’। সোমবার সকালে শিবচরের বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এসব ট্রলারের মালিক স্থানীয় জেলেরা। যাঁরা মাছ ধরার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য পদ্মা নদীর সৌন্দর্য দেখানোর সেবায় আগ্রহী। ট্রলারগুলো দেখতে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন করা হবে। দর্শনার্থীরা ভ্রমণে যেন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সে কথা ভেবেই ট্রলারগুলো তৈরি করা হচ্ছে। ভ্রমণতরিতে লাইফ জ্যাকেটসহ ভ্রমণ এলাকা তথা চরাঞ্চলগুলোয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। ভবিষ্যতে পর্যটকদের সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত একধরনের অ্যাপস তৈরির পরিকল্পনা আছে।

ভ্রমণতরিগুলো উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতুকে ঘিরে পর্যটন খাতে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আপনারা সুখবরগুলো পাবেন। যে পর্যটন উপভোগ করতে সারা বাংলাদেশ থেকে মানুষ শিবচর আসবে। ইতিমধ্যে শিবচরের চরাঞ্চলে ১ হাজার ২০০ একর জায়গায় দুগ্ধ খামারের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু করা হয়েছে। এতে একই সঙ্গে কর্মসংস্থান ও পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

শিবচরের চরাঞ্চলের জেলেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পর্যটনের বিকাশ সাধনে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মাদারীপুর জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন। তিনি বলেন, এতে জেলেদের বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। পদ্মা নদী ও এর চরাঞ্চলের সৌন্দর্য সহজেই উপভোগ করতে পারবেন ভ্রমণপ্রেমীরা। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে পদ্মা সেতু দেখতে পাবেন তাঁরা। পর্যটকেরা পদ্মা সেতু ও মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ভাস্কর্যসমৃদ্ধ শিবচরের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হবেন।