পন্টুনেই দাঁড়িয়ে থাকছে গাড়ি, দুর্ঘটনার ঝুঁকি

দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরির পন্টুনের ওপর গাড়ি রাখা নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফেরিতে ওঠার জন্য রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে বিভিন্ন যানবাহন ঝুঁকি নিয়েই পন্টুনে অপেক্ষা করে। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক পথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট। এই নৌপথে প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি পারাপার হয়। দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী যানবাহনের চালকেরা গোয়ালন্দ মোড় পার হয়ে দ্রুত ফেরির নাগাল পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পর কে আগে ফেরিতে উঠবে, প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ঘাটে ফেরি না থাকলেও এসব গাড়ির চালকেরা পন্টুনে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। অথচ পন্টুনের ওপর যানবাহন রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ। পন্টুনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ফেরি ভেড়ার পর পন্টুনের সঙ্গে ধাক্কায় যেকোনো সময় গাড়ি নদীতে পড়ার আশঙ্কা থাকে। পন্টুন বা সংযোগ সড়কে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে আনলোড হওয়া গাড়ি ওপরে ওঠার রাস্তা না পেয়ে যানজট লেগে যায়। এতে ভোগান্তি তৈরি হয়।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে ফেরি নেই। কিন্তু ঘাটের পন্টুনে মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্সসহ একাধিক গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। বরিশাল থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সের চালক রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘ঢাকা থেকে রোগী আনতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে যেতে হচ্ছে। আগে আরও গাড়ি যেতে দেখে, এখানে এসেছি।’

পন্টুনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের চালক মোবারক আলী বলেন, ‘পন্টুনে আসার সময় কেউ বারণ করেনি। তাই পন্টুনে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সতর্কতার সঙ্গে আছি।’

ঘাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত ১১ মে একটি মাইক্রোবাস ৫ নম্বর ঘাটে ফেরিতে ওঠার জন্য পন্টুনে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন ঝোড়ো বাতাসে তার ছিঁড়ে পন্টুনটি নদীর প্রায় ৩৫০ মিটার দূরে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে র‌্যাম্প থেকে মাইক্রোবাসটিও নদীতে পড়ে যায়। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে চালকসহ মাইক্রোবাস পানিতে তলিয়ে যায়। দুই দিন পর নিখোঁজ চালকের লাশ উদ্ধার করা হয়।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম বলেন, পন্টুন বা র‌্যাম্পে যানবাহন রাখা নিষেধ। কিন্তু ঘাটে আসার পর চালকেরা ফেরিতে আগে ওঠার জন্য প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। তাঁরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেন না। বিষয়টিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি থাকা দরকার।

দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মোন্নাফ বলেন, ‘যানবাহন যাতে পন্টুনে বা র‌্যাম্পে দাঁড়িয়ে না থাকে, এ জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। চালকদের খামখেয়ালিপনার কারণে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছি না।’