পরিত্যক্ত ফ্রিজে সবুজ বাগান

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে পরিত্যক্ত ফ্রিজে বাগান করেছেন সুমন। সম্প্রতি তাঁর বাড়ি থেকে ছবিটি তোলা
প্রথম আলো

জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌর শহরের শিমলাপল্লী গ্রামের যুবক রোকনোজ্জামান সুমন (৪০)। তিনি নষ্ট ও পরিত্যক্ত ফ্রিজে গড়ে তুলেছেন সবুজ বাগান। তাঁর বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে সবুজ আর সবুজ। বলা চলে বাড়িটা সবুজের সমারোহ।

সুমন পেশায় একজন ফ্রিজ মেরামতকারী। ফ্রিজ মেরামতের জন্য তাঁর আছে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন গাছের চারা সংরক্ষণের আগ্রহ আছে তাঁর। তিন বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে থেকে ২০০৭ সালে দেশে ফিরে আসেন। আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা গাছ ঘিরে নেন নতুন কিছু পরিকল্পনা। নিজের ৫ শতাংশ বসতভূমিতেই গড়ে তোলেন গাছের দুনিয়া।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সুমনের ৫ শতাংশ বসতবাড়িতে ১০০ প্রজাতির চারাগাছ আছে। গাছের সংখ্যা যখন একটু একটু করে বাড়তে থাকে, তখন নষ্ট ও পরিত্যক্ত ফ্রিজকে টব হিসেবে ব্যবহার করার বুদ্ধি আসে তাঁর মাথায়। সুমনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে শখের বশে গাছ সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। পরে চারা বিক্রি করে বাড়তি অর্থ হাতে আসতে থাকলে তিনি ইনডোর প্ল্যান্টের পরিকল্পনা করেন।

সুমন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নষ্ট ফ্রিজের টব খুবই উপকারী। ভাঙারি দোকানে যখন নষ্ট ফ্রিজ বিক্রি করা হয়, তখন কেবল টিনই কাজে লাগে। এর সঙ্গে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তিন বছর ধরে এই ব্যবস্থাপনা ব্যবহারের ফলে বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, ফ্রিজের ভেতরের ককশিট পানি ধরে রাখে অনেক বেশি সময় ধরে। ফলে শিকড়ও পানি পায়। পানি, সার প্রয়োগ করলে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।

সুমন জানান, ফ্রিজ মেরামতের পাশাপাশি তাঁর এই ইনডোর প্ল্যান্ট থেকে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। শুধু গাছের টব হিসেবেই নয়, ফ্রিজের ছিদ্রগুলো বন্ধ করে মাছ চাষও করেন তিনি। অ্যাকুয়ারিয়ামে রাখা যায় এমন ১২ প্রজাতির মাছও তিনি পরিত্যক্ত ফ্রিজে চাষ করেন বিক্রির জন্য। আশপাশের লোকজনও তাঁর পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিত্যক্ত ফ্রিজে গাছ আর মাছ উৎপাদন করছেন। সুমন বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের দেশে যে পরিমাণ ফ্রিজ নষ্ট ও পরিত্যক্ত হয়, তা সংগ্রহ করে গাছের টব হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাহলে আমাদের সবুজ খুঁজতে বাইরে যেতে হবে না, নিজেদের শহরেই ইটের দালানে তৈরি হবে সবুজ শহর।’

সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সুষ্ঠু সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সুন্দর পরিবেশ পরিহার্য। পরিবেশের কোনো রকম ক্ষতি না করে পরিত্যক্ত ও নষ্ট ফ্রিজ দিয়ে সুমন পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত উপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন। সুমনের এই উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ।

সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, নষ্ট ফ্রিজে সবুজের যে সমারোহ ঘটিয়েছেন সুমন, তা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সুমনের প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন সব রকম সহায়তা করবে।