পরিবারের জন্য কাজে লেগে পড়েছে ওরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিম্ন আয়ের পরিবারে অর্থের জোগান দিতে পরিবারের সদস্যরাই শিশুদের কাজে পাঠিয়েছেন

বিদ্যালয় বন্ধ, তাই আসবাবপত্রে নকশা করার কাজে নেমেছে কয়েকটি শিশু। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চাঁদলাই ক্লাব মোড়ে
প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চাঁদলাই জোড়বাগান সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে চোখে পড়ে—একটি শিশু মেশিন দিয়ে একমনে কাঠের ওপর নকশা কাটছে। কথা বলে জানা যায়, তার নাম আবু রায়হান। চাঁদলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় প্রায় এক বছর ধরে সে এ কাজে জড়িয়েছে।

কাঠের আসবাবে নকশা তৈরির যে কারখানায় রায়হান কাজ করছিল, সেখানে তুরাব আলী নামের আরও একজনকে পাওয়া যায়। সে একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তাদের মতো আরও অনেক শিশুই চাঁদলাই এলাকার কাঠের কারখানার কাজে জড়িয়ে গেছে। নিম্ন আয়ের পরিবারে অর্থের জোগান দিতে পরিবারের সদস্যরাই তাদের এ কাজে পাঠিয়েছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন’ প্রকল্পে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) চেতনা মানবিক উন্নয়ন সংস্থা। এর নির্বাহী পরিচালক জাফরুল-উল-আলম জানান, তাঁরা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ৮ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের খুঁজে বের করেন। এ জন্য পুরো জেলাতেই জরিপ করতে হয়েছে তাঁদের। এ সময় তাঁরা লক্ষ করেছেন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এই বয়সী অসংখ্য শিশু কাজে লেগে গেছে। অনেকেই অন্যের গরু-ছাগল চরানো, রাজমিস্ত্রির জোগালিসহ বিভিন্ন কাজ করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জের চরাঞ্চলের শিশুদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। বিদ্যালয় খুললে অনেকেই আর বিদ্যালয়ে ফিরবে না বলে ধারণা তাঁদের।

রায়হান ও তুরাব যে কারখানায় কাজ করছিল, এর পাশেই তাদের বাড়ি। রায়হানের মা রুমালী বেগম বলেন, ‘যুদিল ইস্কুল খুলে, আর যাইতে চাহে তো আবার পাঠাব।’ তুরাব আলীর মা ববি খাতুন বলেন, ‘কামে দিয়াছি কী সাধে। বাপে খরচা দেয় না। কাজে লাগাবোনা তো কী করবো?’

চাঁদলাইয়ের সাবদুল হোসেনের ছেলে মো. সিহাব পঞ্চম শ্রেণি থেকে অটোপাস করেছে। এরপর আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি না হয়ে আবদুল জলিল নামের একজনের কাঠের কারখানায় কাজ শুরু করেছে। একই এলাকার পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া শামীম আলী ও রহমত আলী কাজ করছে মামুন প্রামাণিকের কারখানায়। মামুন প্রামাণিক বলেন, তাঁর কাছে অনেক মা-বাবা ছেলেকে নিয়ে এসে কারখানার কাজে দিতে চান। কিন্তু ব্যবসায় মন্দা বলে সবাইকে কাজে নিতে পারেন না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা নানা ভাবে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিদ্যালয় খুললে এসব শিশুরা যাতে ঝরে না পরে, সে বিষয়ে অভিভাবকদের বোঝানো হচ্ছে।