পর্যটন না রেলস্টেশন, দ্বন্দ্ব

তিন নদীর মোহনার স্থানটা এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকের ভাষ্য, রেলস্টেশন করলে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন মোলহেডে রেলস্টেশন সম্প্রসারণ করতে চায় কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের ভাষ্য, এই উদ্যোগের ফল আসবে দ্বিমুখী। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষজন নৌপথে এসে চাঁদপুর থেকে সহজে দেশের পূর্বাঞ্চলে যেতে পারবেন। সঙ্গে চাঁদপুরের ইলিশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো সহজ হবে।

তবে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ অন্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলছেন, তিন নদীর মোহনার যে স্থানটায় রেল কর্তৃপক্ষ উন্নয়নকাজ করতে চাইছে, সেটির পর্যটন গুরুত্ব রয়েছে; আর স্থানটা এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে রেলস্টেশন সম্প্রসারণ করলে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হলেও কোনো পক্ষই ছাড় দিতে নারাজ। সর্বশেষ মঙ্গলবারের বৈঠকেও কোনো সুরাহা হয়নি।

মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন রেলওয়ের রেস্টহাউসে রেল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসে। বৈঠকে রেলওয়ের চট্টগ্রাম অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী সুবক্ত গীন, চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট এ এম সালাউদ্দিন, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোরসালিন রহমান, চাঁদপুর বড় রেলস্টেশন মাস্টার সোয়াইবুল শিকদার, চাঁদপুর রেলওয়ে থানার ওসি মুরাদ উল্লাহ বাহার উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান, পৌরসভার নারী কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াস, চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মানিক জমাদার প্রমুখ।

বৈঠকে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দেশের রেল বিভাগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন রয়েছে। সেই স্বপ্নের প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুরসহ সারা দেশে রেলের ব্যাপক উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে চাঁদপুর শহরের মোলহেডে রেলের নিজস্ব জমিতে প্রধান রেলস্টেশনটি আরও ৮০০ ফুট বর্ধিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই উন্নয়নকাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খুলনা, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের হাজারো মানুষ লঞ্চ ও স্টিমার থেকে নেমে ট্রেনে করে দেশের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম ও সিলেটে সহজে যেতে পারবেন। তা ছাড়া চাঁদপুরের রুপালি ইলিশের খ্যাতি দেশজুড়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতে সহজে এই ইলিশ নিয়ে যাওয়া যায়, সে জন্য রেলের বিশেষ ফ্রিজার ট্রেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই লঞ্চ, স্টিমার ও মাছঘাটের পাশে অবস্থিত মোলহেড এলাকায় স্টেশন সম্প্রসারণের এই উদ্যোগ।

কিন্তু স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ওই স্থানে রেলস্টেশন সম্প্রসারণের বিষয়ে নারাজ। তাঁদের ভাষ্য, বড়স্টেশন মোলহেড এলাকাটি তিন নদীর মোহনায় অবস্থিত। ফলে স্থানটা এমনিতেই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এমন স্থানে রেললাইন এবং স্টেশন বর্ধিতকরণের এই কাজ কিছুতেই টিকবে না।

বৈঠকে পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান বলেন, চাঁদপুর শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান এই বড়স্টেশন মোলহেড। তিন নদীর মোহনার স্থানটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসেন। সেখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমি ‘রক্তধারা’। তিন নদীর মোহনায় হওয়ায় স্থানটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এটি রক্ষা করতে সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১৬৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এমন স্থানে রেলস্টেশন হলে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। ওই স্থান থেকে কিছুটা পূর্ব দিকে রেলস্টেশনটি বর্ধিত করার প্রস্তাব দেন মেয়র।