পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী ট্রেন আর গরিবের বাহন থাকছে না

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামত করা হচ্ছে শোভন শ্রেণির কোচ। তবে এগুলো ঢাকা রুটে চলাচল করে না
প্রথম আলো

গণপরিবহন হলেও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী ট্রেন আর গরিবের বাহন থাকছে না। এসব ট্রেনের কোনো কোচেই রাখা হচ্ছে না শোভন ও সুলভ (তৃতীয় শ্রেণি) শ্রেণির কোচ। বেশি দামে টিকিট কাটতে না পেরে বিনা টিকিটে যাতায়াত বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের।

রেলওয়ে সূত্রে জানায়, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রাজশাহী, খুলনা, চিলাহাটি, রংপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে প্রতিদিন ২৭ জোড়া অর্থাৎ ৫৪টি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করছে বিভিন্ন গন্তব্যে। এর মধ্যে শুধু ঢাকার উদ্দেশেই ১৫ জোড়া ট্রেন চলছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্রে জানায়, ঢাকাগামী কোনো ট্রেনেই শোভন ও সুলভ শ্রেণির সুবিধা এখন নেই। সর্বশেষ গত বছর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে এই ব্যবস্থা। নতুন করে শোভন ও সুলভ শ্রেণির কোচ আমদানিও বন্ধ রাখা হয়েছে। ট্রেনগুলোতে যুক্ত আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্নিগ্ধা চেয়ার কোচ ও শোভন চেয়ার কোচ। ইতিপূর্বে সব ট্রেনেই শোভন ও সুলভ শ্রেণি যুক্ত ছিল। এখন আঞ্চলিক পর্যায়ে কিছু কিছু ট্রেনে ওই সুবিধা বিদ্যমান আছে।

কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ট্রেনগুলো থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের আসনগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কর্মকর্তারা। কোন সিদ্ধান্তে এমনটা হয়েছে, সেটাও কোনো কর্মকর্তা জানাতে পারেননি।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মো. জয়দুল ইসলাম বলেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় কিছু শোভন শ্রেণির কোচ মেরামত হচ্ছে। তবে এসব ঢাকাগামী ট্রেনে যুক্ত হয় না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তাই কেউ আর নিম্ন শ্রেণিতে ভ্রমণ করতে চান না। ফলে নতুন কোচও আমদানি হচ্ছে না।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মারুফ জামান বলেন, এ অঞ্চল থেকে প্রতিদিন শত শত শ্রমজীবী মানুষ ঢাকায় যান কাজের সন্ধানে। ট্রেনে নিম্ন শ্রেণি না থাকায় তাঁরা পড়েছেন বিপাকে। এসব মানুষের ভ্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেনগুলোতে পুনরায় শোভন ও সুলভ শ্রেণি যুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

সৈয়দপুর রেলস্টেশন মাস্টার শওকত আলী বলেন, ঢাকাগামী ট্রেনগুলোতে নিম্ন শ্রেণি থাকলে ভালো হতো। রেলওয়ের সর্বাধিক দূরত্বে চলাচলকারী ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে আন্তনগর একতা, দ্রুতযান ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে বর্তমানে সর্বনিম্ন শ্রেণির ভাড়া (শোভন চেয়ার) ৪৬৫ টাকা। অথচ এসব ট্রেনে শোভন ও সুলভ শ্রেণি যুক্ত থাকলে তার ভাড়া হতো ৩৯০ থেকে ২৩৫ টাকা। প্রথম শ্রেণি ও স্নিগ্ধার ভাড়া অনেক বেশি। সাধারণ মানুষের পক্ষে এত দামে টিকিট কেনা অসম্ভব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ট্রেন টিকিট এক্সামিনার (টিটিই) বলেন, প্রতিদিন কিছু যাত্রী রেলের এক শ্রেণির কর্মচারী ও রেল পুলিশকে (জিআরপি) অল্প কিছু টাকা উৎকোচ দিয়ে বিনা টিকিটে যাতায়াত করছেন। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে শোভন শ্রেণি আমদানি হচ্ছে না। ফলে ট্রেনকে আর গরিবের বাহন বলা যায় না। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে গণপরিবহন হিসেবে ট্রেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী ট্রেনগুলোতে অতীতে কম ভাড়ার বগিগুলোতে হাজার তিনেক যাত্রী চলাচল করত।

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উপপ্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রেলওয়ে হচ্ছে সর্বজনীন ও নিরাপদ গণপরিবহন। ঢাকাগামী ট্রেনগুলোতে সাধারণ শ্রেণি যুক্ত করা হলে রেলের সেবার মান বাড়বে। বিষয়টি রেলের বিভিন্ন সভায় তুলে ধরা হয়েছে।