পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে পদ্মা থেকে বেড়া অপসারণ

প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে সরিয়ে নেওয়া হয় বেড়াপ্রথম আলো

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে মাছ চাষের জন্য আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া শুরু করেছিলেন রাজশাহী মহানগর সৈনিক লীগের দুই নেতা। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই বেড়া নিজেরাই তুলে নিলেন তাঁরা। আর বেড়া দেবেন না বলে মুচলেকাও দিয়েছেন।

দুপুরে রাজশাহী নগরের ফুদকিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মুন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৈরি করা অডোভার মুনসগার্ড পার্ক এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীতে বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হচ্ছে। এই পার্কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মূল নদীর একটি ধারা। আরও দক্ষিণ দিকে চলে গেছে আরেকটি ধারা। মাঝখানে চর পড়ায় দুটি ধারা তৈরি হয়।

কারা এই কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জানতে চাইলে পার্কের একজন দোকানি বলেন, নগরের দরগাপাড়া এলাকার শাহীন ও আপেল নামের দুই ব্যক্তি এর নেতৃত্বে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শাহীন রাজশাহী মহানগর সৈনিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আপেলও একই দল করেন। তবে তাঁর দলীয় পদ আছে কি না, তা জানা যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে শাহীন নিজেকে মহানগর সৈনিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দাবি করে বলেন, তিনি শুধু একা নন, এলাকার সবাইকে নিয়ে মাছ চাষ করার জন্য বেড়া দিচ্ছেন। এভাবে অনেক দিন ধরেই চাঁদপুরের দিকে পদ্মা নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতাও করা হয়।

শাহীনের ভাষ্য, এখানে দুই–তিন লাখ টাকার মাছ ছাড়তে হবে। প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে সেই মাছ বড় হবে। এই মাছের স্বাদই আলাদা। তিনি বলেন, ‘এবার নদীর এই ধারা বড় হয়েছে। অনেক জায়গা ঘিরতে হবে। বড় জায়গা ঘিরে বেশি টাকার মাছ না ছাড়লে পোষাবে না। এ জন্য অনেক টাকা লাগবে। দেখা যাক, কজন ভাগী হন।’

নদীতে বেড়া দেওয়ার কাজটি বেআইনি, এ ব্যাপারে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, প্রশ্নে শাহীন বলেন, এটা তো মূল নদী নয়। নদীর একটা ধারা দুই–তিন মাস পরে শুকিয়ে যাবে। হাঁটার রাস্তা হয়ে যাবে। এই জায়গা দরগাহ শরিফের। দরগার সভাপতি রাজশাহী জেলা প্রশাসক। তাঁর কাছ থেকে তাঁরা ইজারা নিয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই কাগজপত্র পেয়ে যাবেন।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা নদীর এই এলাকায় বিস্তীর্ণ চর পড়ে ছিল। তখন এই চর দখল করে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছিল। তখনো এর নেতৃত্বে ছিলেন সৈনিক লীগের এই নেতা।

কথা বলতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে তাঁর ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে চান। তার নির্দেশনা পেয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে পবা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবুল হায়াত পুলিশ নিয়ে হাজির হন। তখন সেখানে শাহীন ছিলেন না। তবে গোলাম রসুল ওরফে আপেল ছিলেন। গোলাম রসুল মুচলেকা দেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ভবিষ্যতে তারা এ কাজ করবেন না। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেড়ার বাঁশ প্রায় তোলা শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) রাজশাহীর সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রচলিত আইনে নদীতে বেড়া দেওয়া যায় না।