‘পাঁচ দিন ধরি চিড়া আর খিচুড়ি খাইয়া বাঁচিয়া আছলাম’

প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বুধবার বিকেলে সিলেটে কাজিরবাজার তোপখানা বেকারি মাঠ প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

কাজীরবাজারে পানের দোকানে সুপারি কেটে দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা উপার্জন করেন আঞ্জুমান বেগম (৫৫)। বয়স বেড়েছে। অসুস্থতাও এখন নিত্যসঙ্গী। বন্যায় ছয় দিন ধরে নিজের ঘর ছেড়ে সিলেটের কাজীরবাজার এলাকার একটি দোতলা বাসার বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। চারদিকে পানি নামতে শুরু করেছে, কিন্তু তাঁর ঘরে এখনো হাঁটুপানি। বন্যায় উপার্জন বন্ধ। ১৮ বছর আগে স্বামী আবদুর রব মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। ছেলেরা আলাদা হয়ে যাওয়ায় এখন ছোট মেয়েকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি।

বুধবার বিকেল পাঁচটায় কাজীরবাজার তোপখানা বেকারি মাঠ প্রাঙ্গণে প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর একটি প্যাকেট পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আঞ্জুমান বেগম। ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে চোখে পানি চলে আসে তাঁর। তিনি বলেন, ‘বন্যা দেখছি, কিন্তু অত ফানি জীবনে দেখছি না। ইবারের বন্যাতই ঘরে ফানি আইছে। পরিবার নিয়া কুনুদিন আর ঘরের বাইরে থাকছি না। বন্যার ফানিত ঘরোর সব মালামাল ভাসি গেছে। পাঁচ দিন ধরি চিড়া আর খিচুড়ি খাইয়া বাঁচিয়া আছলাম। ত্রাণ পাইয়া অখন মনে শান্তি আইছে। খাওন ওগুইন দি এক সপ্তাহ চলব। শান্তি মতো ভাত খাইতে ফারমু।’

আরও পড়ুন

সিলেটের তোপখানার বেকারি বস্তির বাসিন্দা নয়ন চন্দ্র শীলও (৪৫) অন্য সবার মতো ঘরে পানি ওঠায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন শহরের পরিচিত এক বন্ধুর তিনতলা বাসায়। নয়ন চন্দ্র শীল কাজীরবাজার এলাকার রাস্তায় বসে নরসুন্দরের কাজ করেন। স্থায়ী কোনো সেলুন নেই তাঁর। সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি তিনি। বন্যার পানি আসায় উপার্জন বন্ধ নয়ন চন্দ্রের। মাঝেমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে বিতরণ করা খাবার পেয়ে চলছে তাঁর পরিবার। গত দুই দিন আগে এক বাটি খিচুড়ি পরিবারের চার সদস্য মিলে ভাগ করে খেয়েছেন। আজ প্রথম আলো ট্রাস্ট ও আইডিএলসির ত্রাণের প্যাকেট আনন্দ ও শান্তি লাগছে বলে জানালেন নয়ন চন্দ্র শীল।

দুটি বস্তির ১০০ জন পেয়েছেন প্রথম আলো ট্রাস্ট এবং আইডিএলসির ত্রাণসামগ্রী। বুধবার বিকেলে সিলেটে কাজিরবাজার তোপখানা বেকারি মাঠ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

ত্রাণের প্যাকেট হাতে নিয়ে নয়ন চন্দ্র শীল বলেন ‘রান্দার ছামান পাইছি। অখন পরিবার লইয়া খাইতে ফারুম। বচ্চাইন্তর মুখো এবলা হাসি ফুটব। খুউব খুশি অইছি আইজ।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট নগরের কাজীরবাজার এলাকার দুটি বস্তির এ রকম ১০০ জন পেয়েছেন প্রথম আলো ট্রাস্ট এবং আইডিএলসির ত্রাণসামগ্রী। প্রতিটি ত্রাণের প্যাকেটে ৫ কেজি চাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি আটা, ১ কেজি লবণ, ১০০ গ্রাম গুঁড়া মরিচ ও ১০০ গ্রাম গুঁড়া হলুদ তুলে দেওয়া হয়। ত্রাণ পেয়ে সবার মুখেই হাসি ফুটে ওঠে।

এলাকাটি নগরের ভেতরে হলেও বেশির ভাগই দরিদ্র মানুষের বাস। বন্যায় ওই এলাকার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ত্রাণসহায়তা খুব একটা পাননি। আজ ত্রাণসামগ্রী বিতরণের আগে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত।

বক্তৃতায় রজত কান্তি গুপ্ত বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য প্রথম আলো ও আইডিএলসিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে আসে। প্রথম আলো কেবল বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ প্রচার করে বসে থাকেনি, দুর্গত এলাকার মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে পত্রিকাটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে।’

ত্রাণ পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আঞ্জুমান বেগম। বুধবার বিকেলে সিলেটে কাজিরবাজার তোপখানা বেকারি মাঠ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সহসাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমেদ, অর্থ সম্পাদক সমীর বৈষ্ণব, পরিবেশ সম্পাদক তমা সূত্রধর, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক দ্বীপান্বিতা প্রমুখ।

এর আগে গত সোমবার বিকেল চারটায় প্রথম আলো ট্রাস্টের আর্থিক সহযোগিতায় সিলেট প্রথম আলো বন্ধুসভার সহায়তায় সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রের ১৫০ শিশুর হাতে দেওয়া হয়েছে শিশুখাদ্যের প্যাকেট। প্যাকেটে ছিল দুটি মিনি হরলিকসের প্যাকেট, গ্লুকোজের দুটি প্যাকেট, ছোট দুটি লেক্সাস বিস্কুটের প্যাকেট, এনার্জি প্লাস বিস্কুটের দুটি প্যাকেট, এক প্যাকেট কোকোনাট বিস্কুট, আধা কেজি ওজনের গুঁড়া দুধের প্যাকেট, দুটি খাওয়ার স্যালাইন, চার প্যাকেট মিনি কেক, এক কেজি সুজি ও দুটি সাবান।

বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপের ডোনেশানের মাধ্যমেও আপনার সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।