পাঁচ মাস পরও মেলেনি চতুর্থ কিস্তির টাকা

হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়েছে পাঁচ মাস আগে। কিন্তু সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্যরা এখনো চতুর্থ কিস্তির (চূড়ান্ত বিল) টাকা পাননি। বাঁধের কাজ শেষ করতে গিয়ে ধারদেনা করতে হয়েছে তাঁদের। তাই সময়মতো টাকা না পেয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।

মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, চতুর্থ কিস্তির টাকা না পেয়ে পিআইসি সভাপতিদের অনেকে পাওনাদারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দ্রুত অবশিষ্ট টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চন্দ্র সোনারথাল, গুরমা, গুরমার বর্ধিতাংশ, ঘোড়াডোবা, রুই বিল, সোনামড়ল, কাইলানী, জয়ধনা, ধানকুনিয়া—নয়টি হাওর সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীন। ৯টি হাওরে ১৭০টি পিআইসি রয়েছে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু করে তা চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। পরে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৫ মার্চ পর্যন্ত।

উপজেলা প্রশাসন জানায়, বাঁধের কাজের জন্য বরাদ্দ হয় ৩৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। চার কিস্তিতে এ টাকা পরিশোধ করার কথা। এর মধ্যে তৃতীয় কিস্তি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। চূড়ান্ত বিলের (চতুর্থ কিস্তির) টাকা পরিশোধের জন্য উপজেলার কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে জেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিটির কাছে গত ৭ জুন একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো এ সমস্যার সমাধান মেলেনি।

বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের গুরমার বর্ধিতাংশের এক পিআইসির সভাপতি কৃষক আবদুল আজিজ। তিনি জানান, তাঁদের বাঁধটির দৈর্ঘ্য ৫৩০ মিটার। প্রকল্পটিতে বরাদ্দ ছিল ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ টাকা পেয়েছেন।

একই হাওরের অন্য একটি পিআইসির সভাপতি লেলিন সরকার বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে বাঁধ প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ করেছি। ১৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকা পেয়েছি। ধারদেনা করে কাজ করেছি। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় নিরুপায় হয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি জানে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুদ্দোহা বলেন, কিস্তির টাকা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সময়মতো টাকা না পাওয়ায় পিআইসি সভাপতি ও সদস্যরা কষ্টে আছেন। মাসখানেকের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।