পাইকারিতে দাম নিম্নমুখী

বাজারে আলুসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়েছে। আলুর দাম প্রতি মণে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

উত্তরাঞ্চলে সবজির বড় পাইকারি মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাটে ভরা মৌসুমে সব ধরনের আলুর দামে ধস নেমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন ধরনের আলুর দাম নেমেছে অর্ধেকে। হাটে আলুর আমদানি বেড়ে যাওয়াই দাম কমার কারণ বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মুলা, বেগুন, শিম, গাজরের দামও কমেছে এক সপ্তাহ আগের তুলনায়। তবে আলুর দামে ধস নামার কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি আলুর দাম ১০ টাকা করে কমে গেছে। কৃষকেরা বলছেন, এখন আলু বিক্রি করে তাঁদের কোনো লাভ হচ্ছে না।

আলুর দাম নির্ভর করে সরবরাহের ওপর। এক সপ্তাহ আগেও এই হাটে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক আলুর আমদানি হয়েছে।
জাহিদুল ইসলাম, আড়তদার, মহাস্থান হাট

গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মহাস্থান হাটে গিয়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। হাটে আড়তসহ যেখানে-সেখানে স্তূপ করে রাখা ছিল আলুর বস্তা। ব্যাপারীরা প্রত্যাশিত দাম না বলায় বেশির ভাগ কৃষক সকালের দিকে আলু বিক্রি করেননি। তবে দুপুরের দিকে অনেকে কম দামেই বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন।

কৃষক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও প্রতি মণ দেশি লাল পাকড়ি আলু ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল বিক্রি হয় ৪৪০ টাকায়। মহাস্থান পাইকারি মোকামে প্রতি মণ কার্ডিনাল আলু বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই হাটে প্রতি মণ কার্ডিনাল আলু বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়।

গতকাল মহাস্থান পাইকারি মোকামে প্রতি মণ সাদা গ্রানুলা আলু বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই মোকামে প্রতি মণ গ্রানুলা জাতের আলু বিক্রি হয় ৪০০ টাকা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোকামে প্রতি মণ মুলা ৪০০, বেগুন ৭০০, শিম ৪০০, গাজর ৫০০, কাঁচা মরিচ ৮৮০, ফুলকপি ৬০০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।

হাটত সব ধরনের সবজির দাম পড়চে। আলুর দাম অর্ধেক নামচে। অন্য সবজির দামও পড়চে কেজিতে গড়ে ১০ টেকা পর্যন্ত।
তরিকুল ইসলাম, কৃষক, উথলি গ্রাম

অথচ এক সপ্তাহ আগেও প্রতি মণ মুলা বিক্রি হয়েছে ৭০০, বেগুন ৯০০, শিম ৬০০, গাজর ৮০০ ও কাঁচা মরিচ ৯০০ টাকায়।

শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে হাটত লতুন আলু বেচনো ২০ টেকা কেজিতে। আজকা ব্যাচা লাগিচ্চে ১০ টেকায়।’ নুরুল ইসলাম বলেন, এক কেজি আগাম দেশি আলু চাষে তাঁর খরচ পড়ছে ১০ টাকা। বর্তমান বাজারদরে আলু বিক্রি করে কোনোরকমে খরচ তুলতে পারলেও চাষ করতে যে শ্রম দিতে হয়েছে, তার কোনো মূল্য মিলছে না।

উথলি গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘মহাস্থান হাটত সব ধরনের সবজির দাম পড়চে। গত সপ্তাহের চেয়ে আলুর দাম অর্ধেক নামচে। অন্য সবজির দামও পড়চে কেজিতে গড়ে ১০ টেকা পর্যন্ত।’

এ প্রসঙ্গে মহাস্থান হাটের সবজির পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আড়তদার জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আলুর দাম নির্ভর করে আমদানির (সরবরাহ) ওপর। এক সপ্তাহ আগেও এই হাটে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক আলুর আমদানি হয়েছে। এখন আমদানি বেড়ে ১০০ ট্রাকে উঠেছে। তাতে দামও কিছুটা পড়েছে।

শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে আলুর খেতে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণেও অনেক কৃষক খেত থেকে আলু তুলে বাজারে আনছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতেই বাজারে হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে গিয়ে দাম নিম্নমুখী হয়েছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবার জেলায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩২ লাখ ৮২ হাজার টন। এর বাইরে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আগাম আলু ও সবজির ফলন ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় দাম কম হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকেরা।