পাকা ঘর পেল সম্পার পরিবার

সম্পার পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। নাকাটি গ্রাম, সদর উপজেলা, ৩১ জানুয়ারি দুপুর
প্রথম আলো

জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি গ্রামের তাহাজ্জত সম্পা ভ্যান চালিয়ে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাচ্ছিল। পরে তার বাবার চিকিৎসা, তাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশেষে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক সম্পার পরিবারের কাছে একটি পাকা ঘর বুঝিয়ে দেন।

সম্পা সদর উপজেলার নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। তার পরিবারের চার সদস্য। পাঁচ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন সম্পার বাবা শফিকুল ইসলাম (৪০)। সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়েন। তিনি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। পরে সংসারের হাল ধরতে বছরখানেক আগে ছোট মেয়ে সম্পা ভ্যানটি চালানো শুরু করে। সেই আয় দিয়ে শফিকুলের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ চলত।

সম্প্রতি ‘ছোট দুই হাতে সম্পা টানছে বড় সংসার’ শিরোনামে প্রথম আলোর অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সম্পাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াছমিন তার (সম্পা) বাবা শফিকুলকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে) পাঠান। একই সঙ্গে তাঁদের ঝুপড়ি ভেঙে একটি পাকা ঘর নির্মাণের উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে নাকাটি বাজারে তাঁদের একটি দোকানও করে দেন।
রোববার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পার পরিবারের কাছে নবনির্মিত পাকা ঘরটি বুঝিয়ে দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক ও ইউএনও ফরিদা ইয়াছমিন। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক এনামুল হক বলেন, একজন ছোট মানুষ হয়েও বড় সংসার কাঁধে তুলে নিয়েছিল। সম্পার ভ্যান চালিয়ে বাবার চিকিৎসা ও সংসার খরচের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরেও আসে। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সম্পার বাবার চিকিৎসা ও তাঁদের পুনর্বাসন কাজ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তার বাবার চিকিৎসা হচ্ছে। তাদের সংসার চালাতে একটি দোকান করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে একটি পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। সেই ঘরটি সম্পার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলো।

সম্পা বলে, তার বাবার সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে সংসার একদম অচল হয়ে পড়ে। টাকার অভাবে বাবার চিকিৎসা হচ্ছিল না। অনেক সময় তাদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে। তাই নিজেই ভ্যান চালাতে শুরু করে। সেই টাকায় বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাচ্ছিল। তাদের কষ্টের জীবন দেখে প্রধানমন্ত্রী তার বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। একটি দোকান করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে ভাঙা ঘরটি ভেঙে পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। এসব তাদের কাছে স্বপ্ন ছিল। তার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।