পাকা ঘরে ঘুমানোর ইচ্ছা পূরণ হবে আতেজান বেওয়ার?

জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস আতেজান বেওয়া ও তাঁর মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলের। সোমবার রাজশাহীর বাগমারার কামনগর গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো।

স্বামীর রেখে যাওয়া কুঁড়েঘরই সম্বল বৃদ্ধ আতেজান বেওয়ার (৭৪)। ভাঙা সেই ঘরে ঝুঁকি নিয়ে থাকেন তিনি। পাকা ঘরে বসবাস করতে ইচ্ছা করে তাঁর। সরকার অসহায় ব্যক্তিদের পাকা ঘর করে দিচ্ছে শুনে আশাবাদী হন আতেজান। তবে জীবদ্দশায় সেই আশা পূরণ হবে কি না, জানেন না এই বৃদ্ধা।

আতেজান বেওয়ার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের কামনগর সোনার পাড়া গ্রামে। এক যুগ আগে তাঁর স্বামী জেহের আলী মারা যান। এরপর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী এক ছেলেকে নিয়ে স্বামীর ভিটাতেই বসবাস করছেন। অভাব–অনটনের মধ্যে জীবন যাপন করছেন।

পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিতে পারলেও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েন বৃদ্ধা। উপার্জনের অন্য কোনো পথ নেই। তাই বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করে এবং এলাকার লোকজনের সহায়তায় কোনোরকমে টিকে রয়েছেন। যোগ্য হলেও এত দিন বয়স্ক ভাতা পাননি। মাত্র ছয় মাস আগে প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত এক বিজিবি সদস্যের প্রচেষ্টায় ভাতার তালিকায় আতেজানের নাম উঠেছে।

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে বৃদ্ধা আতেজানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর দুরবস্থা চোখে পড়ে। মাটির পুরোনো বাড়ি। টিনের চালা ভেঙে গেছে। দেয়ালের অনেক স্থানে ফাটল ধরেছে। ঘরের দরজা ভেঙে গেছে। কাঠের তৈরি জানালাও নষ্ট। ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে এবং বৃষ্টির পানি পড়ায় চৌকি বসানো হয়েছে ঘরের বারান্দার এক কোণে। চৌকিতে বসে ছিলেন প্রতিবন্ধী ছেলে মাহাবুর রহমান (৪৫)। তার পাশেই রয়েছে হাঁস-মুরগি রাখার ঘর।

নিজের থাকার জায়গা এই প্রতিবেদককে দেখিয়ে কেঁদে ফেলেন আতেজান। তিনি বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তিনি খুব কষ্টে আছেন। ছেলে যখন কিছুটা স্বাভাবিক থাকেন, তখন মাঝেমধ্যে দিনমজুরের কাজ করেন। অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে কোনো কাজ করতে পারেন না। মধ্যবয়সী ছেলেকেও তাঁকেই দেখেশুনে রাখতে হয়। তিনি আরও বলেন, সরকার অনেককে পাকা ঘর করে দিচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। পাকা ঘরে ঘুমানোর ইচ্ছা তাঁর দীর্ঘদিনের। সরকারকে বলে তাঁর একটা পাকা ঘর করে দেওয়ার জন্য এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন ওই বৃদ্ধা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মমতাজ উদ্দিন বলেন, আতেজান বেওয়ার থাকা ও খাওয়ার খুবই কষ্ট। কিছুদিন আগে তাঁর বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর একটি ঘরের খুব প্রয়োজন। তাঁর ভাঙা বাড়ির ছবি তুলে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি দেখা হবে। খাসজমিতে বাড়ি নির্মাণের প্রকল্প এই মুহূর্তে চালু রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওই বৃদ্ধাকে ঢেউটিন দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।