পাকুন্দিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কুশপুতুল দাহ

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানের কুশপুতুল দাহ করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে পাকুন্দিয়া বাজারে পাকুন্দিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশ, ঝাড়ু মিছিল ও কুশপুতুল দাহ করা হয়।
ছবি: তাফসিলুল আজিজ

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানের কুশপুতুল দাহ করেছেন কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুসারী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

আজ বুধবার দুপুরে পাকুন্দিয়া বাজারে পাকুন্দিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশ, ঝাড়ু মিছিল ও কুশপুতুল দাহ করা হয়।

এর আগে সকাল থেকে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা পৃথক ব্যানারে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সচিবের বিকৃত ছবি নিয়ে নোংরা ভাষায় স্লোগান দেওয়া হয় এবং তাঁকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

সাংসদ ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ এবং সচিব মো. আবদুল মান্নানের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরেই এসব কর্মসূচি পালান করা হয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের গ্রামের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুন

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি বাবুল আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন উপজেলার নারান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরকার শামীম আহমেদ, সুখিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ, হোসেন্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, পাকুন্দিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন, উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন ও কটিয়াদী উপজেলার চানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মুরাদ প্রমুখ।

বক্তারা সরকারের কাছে সচিবের দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান একজন ভূমিদস্যু। কমিউনিটি ক্লিনিক করার নামে অন্যের জমি জোর করে দখল করে এলাকায় অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদ যখন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে সাধারণ জনগণের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন, সে সময় সচিব আবদুল মান্নান অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সাংসদকে বিব্রত করছেন ও এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করছেন।

দুপুর পৌনে ১২টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ নিয়ে পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারওয়ার জাহান আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের গ্রামের বাড়িতে ৮ শতাংশ জায়গার ওপর একটি স্যাটেলাইট কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্লিনিকটির নামকরণ করা হবে করোনায় মারা যাওয়া সচিবের স্ত্রীর নামে। ক্লিনিকে যাওয়ার একটি সড়কও নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব কাজে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছেন সচিব। এ নিয়ে এলাকার কিছু মানুষের মতবিরোধ আছে। এ ছাড়া ক্লিনিক নির্মাণ বিষয়ে সাংসদকে অবগত করা হয়নি—এমন অভিযোগ সাংসদের অনুগত ব্যক্তিদের। বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা চলছে।

কিশোরগঞ্জ জেলায় করোনার টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করতে সচিব মো. আবদুল মান্নান ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে আসেন। শনিবার সকালে একদল মানুষ সচিবের বাড়িতে ও নির্মাণাধীন ক্লিনিকে দফায় দফায় হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলমকে পুকুরে ফেলে দেন।

সচিবের পরিবারের দাবি, হামলাকারীরা সাংসদের অনুগত। সাংসদের ইশারায় তাঁদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনার পর সচিব উদ্বোধন কর্মসূচি বাতিল করে র‌্যাবের নিরাপত্তায় ঢাকায় ফেরেন। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন