পাটকল বিরাষ্ট্রীয়করণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি

‘পাটশিল্পের বর্তমান প্রেক্ষিত ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা করে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ। খুলনা প্রেসক্লাব, ১১ আগস্ট। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
‘পাটশিল্পের বর্তমান প্রেক্ষিত ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা করে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ। খুলনা প্রেসক্লাব, ১১ আগস্ট। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বিরাষ্ট্রীয়করণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ। এই ব্যানারে আজ মঙ্গলবার খুলনা প্রেসক্লাবে ‘পাটশিল্পের বর্তমান প্রেক্ষিত এবং নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়।
সভায় পাটকলগুলোর লোকসানের মূল কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানে পাটের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপ আয়োজন করা, মিলগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে প্রতিটি মিলপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা, সব পাটকলের মাথাভারী প্রশাসন কমানো ও মিলগুলোর আধুনিকায়নের দাবিও জানানো হয়।
সভায় ১৬ আগস্ট খুলনা আটরা শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের পদযাত্রা ও ১৭ আগস্ট খালিশপুর এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর আগে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন আ ফ ম মহসিন।

সভায় বক্তারা বলেন, মিলগুলো বন্ধ করতে সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা বাজেট ধার্য না করে বরং শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) প্রস্তাব অনুয়ায়ী ১ হাজার ২০০ কোটি টাকায় আধুনিকীকরণ করা সম্ভব। এ ছাড়া মিলের পুরোনো মেশিন বিক্রি করে আরও ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। অতীতে দেশে যেসব কলকারখানা বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হয়েছে, তার একটিও চলেনি। বরং স্বার্থান্বেষী মহল ওই সব কলকারখানা দেখিয়ে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করেছে। এখানে যে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশে পরিবহন, আবাসন, নগরায়ণ, পর্যটন, অর্থনৈতিক অঞ্চল, স্বাস্থ্য ,জ্বালানি, শিক্ষা ও শিল্প খাতে মোট ৫৬টি প্রকল্প সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিতে (পিপিপি) চলছে। সেগুলোর কোনোটির অবস্থা ভালো নয়। অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তাই পাটকলগুলো পিপিপিতে চালানোর মাধ্যমে পাটশিল্পকে রক্ষা করা যাবে, সরকারের এ কথায় আস্থা রাখা যায় না। বরং লুটপাটের আরেকটি নতুন স্বর্গরাজ্য সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

বক্তারা বলেন, পাটকলগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনায় ৯ দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। আগের ৭৭টি পাটকল পরিচালনা করতে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বর্তমানে যে কাঠামো রয়েছে, তা পরিবর্তন করে এখনকার ২৫টি পাটকলকে পরিচালনার মতো দক্ষ ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরি করতে হবে। পাটপণ্যকে বহুমুখীকরণ করে নতুন বিশ্ববাজার অনুসন্ধান করতে হবে। ২০১০ সালের ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট কার্যকরের মাধ্যমে সব জায়গায় পাটের ব্যাগ এবং বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি মিলের স্থানীয় ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করে তাদের লাভ-লোকসানের জন্য দায়বদ্ধ করতে হবে।
শ্রমিকেরা জানান, ২০০২ সালে বৃহত্তর আদমজী জুট মিল বন্ধ করে সেখানে নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে কিছুই হয়নি। বরং মিলের ২৯ একর জমি বিভিন্নভাবে হাতছাড়া হয়েছে।

বক্তারা বলেন, বেসরকারি পাটকলগুলো যখন লাভ করছে, ঠিক তখন রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা এবং পিপিপিতে পাটকল চালানোর সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক, সেটা বিবেচ্য বিষয়। পাটকলগুলো বেসরকারীকরণের আগে মিলগুলোতে কেন লোকসান হচ্ছে, তার কারণ চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন। একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় সম্পদকে রক্ষা করা। মিলগুলো বন্ধ না করে আধুনিকায়নের দাবি জানান বক্তারা।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক আইনজীবী কুদরত-ই খুদা, পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্যসচিব এস এ রশিদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শাহনেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির, আইনজীবী এনায়েত আলী, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সুকুমার ঘোষ, শ্রমিকনেতা আলমগীর হোসেন, হুমায়ুন কবির, জসিম গাজী, অলিয়ার রহমান প্রমুখ।