পাটুরিয়া ঘাটে বৈরী আবহাওয়ায়ও যাত্রীর চাপ

যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ফেরি আমানত শাহ দৌলতদিয়া প্রান্তে ছেড়ে যায়
আব্দুল মোমিন

বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষ আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ভিড় করছেন। বৃষ্টিতে ভিজে পায়ে হেঁটে ঘাটে আসেন অনেক যাত্রী। ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও আছে ঘাট এলাকায়।

এ দিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে সীমিতসংখ্যক ফেরি দিয়ে যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। এতে দীর্ঘ সময় যাত্রীদের ঘাট এলাকায় আটকে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঘাট এলাকার প্রায় আট কিলোমিটার আগে যানবাহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় শিবালয় উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবির সদস্যরা। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে আজ ঘরমুখী যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লাশ, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারের জন্য পাঁচ-ছয়টি ফেরি নিয়োজিত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ফেরির সংখ্যা কমানো ও বাড়ানো হয়। তবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মস্থলে ঈদ করার কথা থাকলেও রাজধানী ঢাকা ছেড়ে আসা হাজারো মানুষ পাটুরিয়ায় এসে ভিড় করছেন। এসব যাত্রী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন জেলায় ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যাত্রীরা ঢাকা থেকে লোকাল বাসে ভেঙে ভেঙে মহাসড়কের শিবালয়ের টেপড়া এলাকায় আসেন। সেখানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু দারদা ও বিজিবির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং যানবাহনগুলো উল্টোপথে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ঘাটে আসছে। যাত্রীরা ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে লোকাল বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, এমনকি পিকআপ ভ্যানে করে পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হন।

গাদাগাদি করে ফেরিতে নদী পার হচ্ছেন যাত্রীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পাটুরিয়ার তিন নম্বর ঘাট এলাকায়
প্রথম আলো

টেপড়া এলাকায় আসার পর যাত্রীদের যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর সেখান থেকে রিকশা, রিকশাভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলে করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পাটুরিয়ায় আসছেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে অনেক যাত্রী ঘাটে পৌঁছান। ঘাটে এসে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় ফেরির অপেক্ষায় থাকতে হয়।

পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় কয়েক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘাটের ৮-১০ কিলোমিটার আগে গাড়ি থেকে তাঁদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এতে তাঁদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৭টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ফেরি দিয়ে জরুরি যানবাহন পারাপার হওয়ার কথা থাকলেও যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছয়টি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে দৌলতদিয়া প্রান্তে যায়।

ঘাটে ফেরি ভিড়তে দেখে যাত্রীদের দৌড়। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পাটুরিয়ার তিন নম্বর ঘাট এলাকায়
প্রথম আলো

বেলা ১১টার দিকে দেখা গেছে, কোনো ফেরি ভিড়লে যাত্রী ফেরিতে ওঠতে দৌড় শুরু করেন। পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাটে আমানত শাহ পন্টুনে ভিড়লে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে ফেরিতে ওঠে পড়েন। পরে ফেরিটি ঘাট ছেড়ে যায়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে আকস্মিক বৃষ্টি শুরু হলে যাত্রীদের কেউ কেউ ভিজেই ফেরিতে ওঠতে ছোটাছুটি করেন। নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ ছিল বেশি।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শুধু লাশ ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারের সিদ্ধান্ত বহাল আছে। তবে এসব গাড়ি লোড ও আনলোড করার সময় যাত্রীরা ফেরিতে ওঠে পড়েন।