পাটুরিয়ায় এখন গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকা ছিল নিত্যসঙ্গী। পদ্মা সেতু উদ্বোধন পর থেকে পাটুরিয়ার এই চিত্র পাল্টেছে। এখন যানবাহনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় ফেরিগুলোকে
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা এবং দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ির শ্রমিকদের আটকে থাকতে হতো। ভোগান্তি ছিল ফেরিঘাটের নিত্যসঙ্গী। দুই দিন আগেও যাত্রী ও যানবাহনের চাপে এই ঘাটে ছিল দীর্ঘ যানজট।

পদ্মা সেতু খুলে দেওয়াতে পাটুরিয়া ঘাটের এই চিত্র এখন পাল্টেছে। ঘাটে আসামাত্র যাত্রী ও যানবাহনগুলো ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। এমনকি মাঝেমধ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ফেরিগুলোকে।

আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে পাটুরিয়া ঘাট এলাকার এই ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে। কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথ পারাপার হচ্ছে যাত্রী ও যানবাহনগুলো। গতকাল রোববার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এবং শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা বহুমুখী সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাট এলাকায় দুটি ট্রাক টার্মিনালই ফাঁকা। সড়কগুলোতে নেই পণ্যবাহী গাড়ির সারি। পারাপার হওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীবাহী বাসও নেই। ঘাট এলাকায় আসার পরপরই ফেরি টিকিট নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেরিতে উঠে যাচ্ছে যাত্রী ও যানবাহনগুলো। লঞ্চঘাটেও যাত্রীর ভিড় নেই। ঘাটে যাত্রীদের সেই কোলাহল কমে গেছে। হোটেল ব্যবসায়ী ও হকারদের ব্যস্ততাও কমেছে।

নরসিংদীর ঘোড়াশাল থেকে কোমল পানীয়ের (জুস) চালান নিয়ে সাতক্ষীরার ভোমরা যাচ্ছেন ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০)। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়ার ট্রাকটার্মিনালে ফেরির টিকিট নিতে আসা এই পরিবহনশ্রমিকের চোখেমুখে স্বস্তি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী যে কষ্ট করতে অইতো এই ঘাটে আইস্যা! দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত ঘাটেই আটকা থাকতে অইতো; নাওনখাওন ঘাটেই করতে অইতো। কী যে যন্ত্রণা সইতে অইছে। আজ ঘাটে আসামাত্রই টিকিট পাইলাম।’ এর পরপরই তিনি ট্রাক নিয়ে ৪ নম্বর ঘাটে গিয়ে ফেরিতে উঠে যান।

পাটুরিয়া দিয়ে পদ্মা পার হতে আসা যানবাহন কমে আসার চিত্র পাওয়া গেল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) হিসাব থেকেও। সংস্থাটির আরিচা কার্যালয়ের দেওয়া হিসাবমতে, ২০ জুন থেকে গত শনিবার (২৪ জুন) সকাল ছয়টা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৬০০টি বিভিন্ন যানবাহন নদী পারাপার করা হয়। আর গত শনিবার সকাল ছয়টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ছয়টা পর্যন্ত পারাপার হয়েছে ২ হাজার ৬০০ যানবাহন। যানবাহনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল।

আজ বেলা ১১টার দিকে পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে কথা হয় চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের বাসের যাত্রী কাইয়ুম হোসেনের (৪৫) সঙ্গে। ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদরে যাচ্ছিলেন তিনি। ভোগান্তি অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কাইয়ুম বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে মাসে দুই থেকে তিনবার ঢাকায় যেতে হয়। ঘাটে আসলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো। কিন্তু আজ ঘাটে আসার পর বাস সরাসরি ফেরিতে উঠে গেল!’

সার্বিক পরিবহনের বাসের পাটুরিয়া ঘাট সুপারভাইজার আবদুর রশিদ বলেন, এখন আর ফেরির জন্য যানবাহনগুলোকে মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। উল্টো যানবাহনের জন্য ফেরিগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঘাটে আসা প্রতিটি যানবাহন সরাসরি ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। এতে চালক ও সহকারীদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

লঞ্চঘাটে কথা হয় বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক পদির্শক (পরিবহন) তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্ষার এ সময় লঞ্চের যাত্রী সাধারণত কম থাকে। এরপরও দুই দিন ধরে লঞ্চের যাত্রী আরও কমে গেছে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের কাছে আশীর্বাদ। এ সেতু উদ্বোধন হওয়াতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথের যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কিছুটা কমেছে। যাত্রী ও যানবাহন স্বস্তিতে পারাপার হচ্ছে। তবে যানবাহন কমার পরিসংখ্যানটা আসন্ন ঈদে বোঝা যাবে। এই নৌপথে ছোট-বড় ২০টি ফেরি চলাচল করছে।