পাটুরিয়ায় যাত্রীতে ঠাসা ফেরি

রোববার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খোলা। তাই ফেরিতে কর্মস্থলগামী মানুষের প্রচণ্ড চাপ বেড়েছে। শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাট এলাকায়
ছবি: আব্দুল মোমিন

কাল রোববার থেকে সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলা। এ কারণে আজ শনিবার সকাল থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ কর্মস্থলে যোগ দিতে করোনার ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। এতে যাত্রীদের চাপে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায়। পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছেন ঢাকামুখী যাত্রীরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, রোববার থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলার কারণে শনিবার সকাল থেকে ফেরিতে ঢাকাগামী যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় বেড়েছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে এখন আটটি ফেরি চলাচল করছে।

ঘাট-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার অসংখ্য মানুষ গ্রামের বাড়ি যান। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধের কারণে শিল্পকারখানা ও অফিস বন্ধ থাকায় তাঁদের অনেকেই এত দিন বাড়িতেই ছিলেন। তবে মালিকদের দাবির মুখে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই রোববার থেকে তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ কারণে শনিবার সকাল থেকে কর্মস্থলে যোগ দিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার কর্মজীবী মানুষ ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় রওনা দেন।

ফেরি থেকে নামার পর চার-পাঁচ গুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ছোট ছোট বাহনে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন যাত্রীরা।

এসব মানুষ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে ফেরিতে নদী পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসছেন। তবে বিধিনিষেধের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ফেরিতে যাত্রীদের চাপ পড়েছে। প্রতিটি ফেরিতেই যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ দেখা গেছে। ফেরিতে গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যাত্রী পারাপারের কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে যাত্রী বোঝাই করে ফরিদপুর নামের একটি ফেরি পাটুরিয়া ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ভেড়ে। এ সময় ফেরিতে গাদাগাদি করে যাত্রীদের নদী পার হতে দেখা যায়। যাত্রীদের ভিড়ে ফেরিতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই ছিল না। ফেরি থেকে নামার পর চার-পাঁচ গুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ছোট ছোট বাহনে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন যাত্রীরা।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে এসে যানবাহনের খোঁজে যাচ্ছেন কর্মস্থলগামী মানুষ। শনিবার দুপুরে পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাটে
ছবি: আব্দুল মোমিন

ঢাকার ধামরাইয়ের একটি পোশাককারখানার শ্রমিক মো. আরিফ (৩০)। ফেরিতে নদী পার হয়ে পাটুরিয়ার ৪ নম্বর ঘাটে আসেন তিনি। তিনি বলেন, যশোর থেকে ছোট ছোট বাহনে পথ ভেঙে ভেঙে দৌলতদিয়া প্রান্ত পর্যন্ত আসতে তাঁর ২ দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধামরাই পর্যন্ত যেতে আরও ১ হাজার টাকা খরচ হবে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় এ পথ যেতে ৫০০ টাকা খরচ হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ রেখে কারখানা খুলছে। এই বাড়তি ভাড়া কি অফিসের স্যারেরা আমাগো দিব?’

ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার একটি পোশাককারখানার কর্মী আওলাদ হোসেন ফরিদপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাল কারাখানা খোলা। অথচ বাস চলাচল বন্ধ। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কাজে যাচ্ছি। আমাগোরে কষ্টে কারও কোনো চিন্তাভাবনা নাই।’

বিধিনিষেধে গত কয়েক দিনে ঘাট এলাকায় যাত্রীদের চলাচলে কড়াকড়ি থাকলেও আজ পুলিশসহ ঘাট-সংশ্লিষ্টদের যাত্রীদের নমনীয়তা ছিল। শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ কবির বলেন, আজ সকাল থেকে পাটুরিয়ায় ঢাকাগামী কর্মজীবী মানুষের প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। আগামীকাল থেকে শিল্পকারখানা খোলা। এসব কারখানার কর্মীরা কর্মস্থলে যাচ্ছেন। এ কারণে আজ তাঁদের চলাচলে পুলিশ শিথিলতার মনোভাব নিয়ে কাজ করছে।