পাটুরিয়ায় সকালে ঘরমুখী যাত্রীর চাপ, দুপুরে কমেছে

চাপ বেড়ে যাওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিতে গাদাগাদি করে যাত্রীদের পার হতে দেখা যায়। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ৩ নম্বর ঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঈদুল ফিতরের প্রায় এক সপ্তাহ বাকি। এরই মধ্যে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে আজ শুক্রবার সকালে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি ছিল ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও। তবে দুপুরে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এ সময় যাত্রীর চাপ না থাকলেও বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ির কিছুটা চাপ ছিল।

পাটুরিয়া ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। এ ছাড়া প্রায় এক সপ্তাহ পরই ঈদ। এ কারণে এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ গ্রামের বাড়ি যেতে শুরু করেছে। এতে আজ শুক্রবার সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ থাকায় প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও হাইয়েসসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও বেড়ে যায়। ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ১৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রীদের পারাপার করে ফেরি কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এসব ব্যক্তিগত গাড়িও ফেরিতে পারাপার করা হচ্ছে। তবে দুপুরে যাত্রীদের চাপ একেবারেই কমে যায়।

সকালে যাত্রী ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সব কটি ফেরিই পারাপারে নিয়োজিত ছিল। তবে দুপুরে যাত্রী ও গাড়ির চাপ কমে এলে আটটি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হয়।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরিবহনের বাসে করে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসেন ঘরমুখী যাত্রীরা। এরপর এসব যাত্রীরা পাঁয়ে হেটে ফেরিতে হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়েন। এ সময় ফেরিতে সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা গাদাগাদি করে এসব যাত্রীদের ফেরিতে অবস্থান করতে দেখা যায়। যাত্রীদের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িও পারাপার করা হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী ও ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ কমতে শুরু করে। দুপুর ১২টার পর থেকে যাত্রীর চাপ একেবারেই কমে গেলেও ব্যক্তিগত গাড়ির কিছুটা চাপ ছিল। পাটুরিয়ার ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট হয়ে এসব যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ি পারাপার করা হয়।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে পাটুরিয়ায় সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ। ফলে যাত্রীরা বিভিন্ন পরিবহনের বাসে করে ঢাকার গাবতলী ও এর আশপাশ থেকে ধামরাইয়ের বারবাড়িয়া পর্যন্ত যান। এরপর সেখান থেকে মানিকগঞ্জের অভ্যন্তরীণ বাসে করে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় পৌঁছান।

ঢাকার শ্যামলীর ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম (৪০) স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া যাচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনায় দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ। গাবতলী থেকে ডি লিংক পরিবহনের একটি বাসে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে তিনি বারবাড়িয়া আসেন। এরপর যাত্রীসেবা পরিবহনের অপর একটি বাসে করে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন তিনি। ৩ নম্বর ঘাট এলাকায় খোরশেদ আলম বলেন, ‘ঈদের আগে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। তখন পরিবার নিয়ে বাড়িতে যেতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে তাই আগেই বাড়ি যাচ্ছি।’

ঈদ সামনে রেখে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ গ্রামের বাড়ি যেতে শুরু করেছে। আজ সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশ থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন।

ঢাকার মিরপুরে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এসজিও) চাকরি করেন যশোরের চৌগাছা উপজেলা সদরের আরিফুল ইসলাম (৪৫)। পাটুরিয়া জিরো পয়েন্ট এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ৩ নম্বর ফেরিঘাটের দিকে ছুটতে দেখা যায়। এ সময় তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা থাকলেও ঈদ বলে কথা! গ্রামের বাড়ি বৃদ্ধ মা–বাবা, আত্মীয়স্বজন ছাড়া ঢাকায় ঈদ করব কীভাবে! তা ছাড়া বাচ্চারা গ্রামের বাড়িত ঈদ করার বায়না ধরেছে।’

বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টি ফেরির মধ্যে ১৫টি সচল রয়েছে। সকালে যাত্রী ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সব কটি ফেরিই পারাপারে নিয়োজিত ছিল। তবে দুপুরে যাত্রী ও গাড়ির চাপ কমে এলে আটটি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হয়।

সংস্থাটির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আজ সকালে ঘাট এলাকায় যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়ে গেলেও দুপুরে যাত্রী কমে যায়। তবে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ কিছুটা রয়েছে। এসব গাড়ির পাশাপাশি জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। ঘাটে আসা যাত্রীদের ওপর নির্ভর করে পারাপারকৃত ফেরির সংখ্যা বাড়ানো ও কমানো হয়।