পাটের দরপতন, মণপ্রতি দাম কমেছে ১ হাজার টাকা

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে পণ্য পরিবহনে জটিলতা, ঈদের ছুটিতে পাটকল ও ক্রয়কেন্দ্র বন্ধ থাকায় পাটের বাজারমূল্যে ধস নেমেছে।

চাষিদের কাছ থেকে পাট কিনে বোঝাই করা হচ্ছে ভটভটিতে। সেগুলো যাবে বিভিন্ন পাটকলে। ছবিটি রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা হাট থেকে তোলা l
ফাইল ছবি প্রথম আলো

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে পাটের দামে ধস নেমেছে। মণপ্রতি পাটের দর ১ হাজার টাকা কমে গেছে। দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি মণ তোশা পাট সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণদরে বিক্রি হয়েছে।

পাট ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। এ অবস্থায় পণ্য পরিবহনে জটিলতা এবং ঈদের ছুটিতে ২০টি পাটকল ও ক্রয়কেন্দ্র বন্ধ থাকায় পাটের বাজারমূল্যে এমন ধস নেমেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর চরাঞ্চলে প্রতিবছর প্রচুর পাট চাষ করেন কৃষকেরা। টানা কয়েক বছর ধরে বন্যার কারণে ফসলহানিতে লোকসানে পাটচাষিরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হলেও কয়েক দফা বন্যায় বেশির ভাগ পাট খেতেই নষ্ট হয়ে যায়। এবারও এই উপজেলায় ৭ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। চরের কৃষকেরা খেত থেকে নির্ঞ্ঝাট পাট কেটে জাগ দিয়ে ঘরে তুলছেন। এবার লাভের আশা ছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল দাম নিয়ে।

গত শনিবার সারিয়াকান্দি সদরে পাটের হাট বসে। হাটে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

সারিয়াকান্দি হাটে তিন মণ পাট বিক্রি করতে এসেছিলেন কুড়িপাড়া চরের পাটচাষি ধলু ফকির (৭২)। তিনি বলেন, ‘সাড়ে তিন বিঘা জমিনত পাট লাগাচুনু। কাটা-জাগ দেওয়াও শ্যাষ। বিঘায় ফলন হচে সাড়ে আট মণ। ১৫ দিন আগে হাটত এক মণ পাট অ্যানে দাম পাচি ৩ হাজার ৪০০ টেকা। শনিবার হাটত সেই পাট বেচে পানু ২ হাজার ৪০০ টেকা।’

কুড়িপাড়া চরের কৃষক সবুজ ফকির (৪৫) বলেন, ‘সাড়ে আট বিহা জমিনত পাট লাহাইচিনু। ফলন বিঘাত আট মণ। দামডাও দুই হপ্তা আগে ভালোই আচলো। করোনা হামাকেরে মাথাত বাড়ি দিচে। এক মণ পাটে ১ হাজার টেকা দাম করে গেচে।’

কৃষি বিভাগের হিসাবমতে, ২৫ জুলাই পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খেতের পাট কেটে কৃষক ঘরে তুলেছেন। প্রায় এক মাস ধরে কৃষকেরা খেতের পাট হাটে-আড়তে বিক্রিও করছেন। বন্যা না হওয়ায় এবার মৌসুমের শুরু থেকেই পাটের ফলন ও বিক্রি দুই–ই ভালো ছিল। বাজারে পাটের আমদানিও শুরু থেকেই এবার অনেক বেশি ছিল। কৃষকেরা বলছেন, দুই সপ্তাহ আগেও পাটের দাম ছিল বাড়তির দিকে। কিন্তু ঈদের ছুটিতে পাটকল ও ক্রয়কেন্দ্র বন্ধের সঙ্গে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে পাটের বাজারমূল্যে এখন ধস নেমেছে। মণপ্রতি ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পড়ে গেছে।

সারিয়াকান্দি হাটের পাটের ব্যাপারী আবদুর রশিদ (৫৫) বললেন, সপ্তাহ দুয়েক আগেও এই হাটে গড়ে ১ হাজার ২০০ মণ পাটের আমদানি ছিল। প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা মণদরে। বিধিনিষেধের মধ্যে হাট বসলেও এখন পাটের আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। পড়ে গেছে দামও। মানভেদে প্রতি মণ পাট এখানে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা মণদরে বেচাবিক্রি হয়েছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, কঠোর বিধিনিষেধের কারণে পণ্য পরিবহনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। মোকামে পাটবাহী ট্রাক পাঠানো যাচ্ছে না। আবার ঈদের ছুটিতে জেলার প্রায় ২০টি পাটকল এবং ক্রয়কেন্দ্রও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে হাটে পাটের আমদানি ও দাম দুই–ই পড়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় ১২ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ২৭০ মেট্রিক টন। প্রতি মণ পাটের বাজারমূল্য গড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে এবার জেলায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার পাট উৎপাদন হওয়ার কথা।