পাথর উত্তোলন ঠেকাতে গিয়ে নিখোঁজ, ডাউকি নদীতে মিলল লাশ

নিহত পাথর ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান (৩২)
সংগৃহীত

সিলেটের জাফলংয়ের একটি চা-বাগানে রাতের বেলা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছিল কিছু দুর্বৃত্ত। তা ঠেকাতে কয়েকজন শ্রমিককে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গত সোমবার রাতে নিখোঁজ হন পাথর ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান (৩২)। আজ বুধবার বিকেলে জাফলংয়ের ডাউকি নদী থেকে ডুবুরি দল তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে।

পুলিশ ধারণা করছে, দুর্বৃত্তরা শফিকুরকে মারধর করে নদীতে ফেলে দেয়। লাশ উদ্ধারের পর শফিকুরের মাথায় আঘাত পাওয়া গেছে। বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য বিকেলে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে লাশটি পাঠিয়েছে পুলিশ।

নিহত শফিকুর গোয়াইনঘাটের লাবু উত্তরপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইব্রাহিম আলীর ছেলে। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি পাথর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

সোমবার রাতে শফিকুর কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে ডাউকি নদীর জাফলং চা-বাগান এলাকায় যান। সেখানে রাতে পাথর উত্তোলন চলছিল। এ সময় দুর্বৃত্তদের হামলার মুখে পড়েন শফিকুর।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত সোমবার রাতে শফিকুর কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে ডাউকি নদীর জাফলং চা-বাগান এলাকায় যান। সেখানে রাতে পাথর উত্তোলন চলছিল। এ সময় দুর্বৃত্তদের হামলার মুখে পড়েন শফিকুর। দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত অবস্থায় পাঁচজন পাথরশ্রমিক সেখান থেকে পালিয়ে যান। শ্রমিকদের কাছ থেকে ঘটনাটি জেনে পরদিন শফিকুরের বাবা মো. ইব্রাহিম আলী গোয়াইনঘাট থানায় ১০-১২ জনের নামোল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে আটক করে শফিকুরের সন্ধান চালায় পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একদল ডুবুরি নিয়ে ডাউকি নদীর ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু শফিকুরের খোঁজ পাওয়া যায়নি। আজ দুপুরের দিকে ডাউকি নদীতে স্থানীয় লোকজন একটি লাশ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। পরে লাশটি শফিকুরের বলে শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা।

শফিকুরের বাবা বলেন, রাতের বেলা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ঠেকাতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হামলার মুখে পড়েন তাঁর ছেলে। তাঁকে হত্যা করে লাশ গুম করতে নদীতে ফেলা হয়েছে।

শফিকুরের ওপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে জাফলং চা-বাগান এলাকার স্বপন, চাউরা খেলগ্রামের অমূল্য দে ও নয়াবস্তি গ্রামের আবদুন নূর নামের তিন যুবককে আটক করা হয়েছে।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আহাদ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, শফিকুরের ওপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে জাফলং চা-বাগান এলাকার স্বপন, চাউরা খেলগ্রামের অমূল্য দে ও নয়াবস্তি গ্রামের আবদুন নূর নামের তিন যুবককে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে।

ওসি বলেন, নিহত ব্যক্তির মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হামলার পর শফিকুরের বাবা যে অভিযোগ থানায় দিয়েছিলেন, সেটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করে আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।