পাথরঘাটায় নৌকা ঠেকাতে মাঠে ৪ প্রার্থী

  • মেয়র পদের ওই চার প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীসহ চার মেয়র প্রার্থী একসঙ্গে গণসংযোগ করেন। গত রোববারের ছবি
প্রথম আলো

বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আনোয়ার হোসেনকে ঠেকাতে এককাট্টা হয়েছেন বিএনপি, আওয়ামী লীগের দুই ‘বিদ্রোহী’সহ চার প্রার্থী। গত রোববার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণার পর ওই চার প্রার্থী শহরের বাজার রোগসহ প্রধান প্রধান সড়কে গণসংযোগ করে ভোটারদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান।

ওই চার প্রার্থী হলেন বিএনপি মনোনীত পাথরঘাটা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি সাহাবুদ্দিন সাকু, আওয়ামী লীগের দুই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও শাহ আলম মল্লিক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান খান। তাঁদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান পাথরঘাটা উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও শাহ আলম মল্লিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আওয়ামী লীগের দুই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী স্থানীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শওকত হাচানুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে।

পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনে রোববার মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করেন। এ পৌরসভায় আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা জানান, পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে তাঁদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বেশ অভিযোগ ছিল। কিন্তু মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন। নৌকা বিজয়ের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাথরঘাটা পৌর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার থেকে পাথরঘাটা পৌর এলাকায় বিএনপি, আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহীসহ চার মেয়র প্রার্থী যৌথভাবে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এভাবে আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত তাঁরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন বলে গণসংযোগে নাগরিকদের আশ্বস্ত করেছেন।

রোববার গণসংযোগের সময় ওই চার মেয়র প্রার্থী ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। আপনাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া আমাদের এ চারজনের মধ্যে যাঁকে খুশি তাকে ভোট দেবেন, এই অনুরোধ রইল। আমরা বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।’

আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ আলম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চার প্রার্থীর একটাই দাবি, দুর্নীতিবাজ নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে যাঁকে খুশি তাঁকে ভোটাররা বেছে নিক।’

আওয়ামী লীগের অপর ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে যিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন, মাঠে তাঁর কোনো ভোট নেই। নৌকা প্রতীক নিয়েও তিনি শতকরা পাঁচটি ভোট পাবেন না। তাই আমরা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে স্থানীয় সাংসদসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। দলীয় শৃঙ্খলা উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকার ভরাডুবির জন্য বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে তাঁরা জোট বেঁধেছেন। সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে জনগণের ভোটে গতবারের মতো এবারও আমি নৌকা নিয়ে বিজয়ী হব।’ তবে মেয়র থাকাকালে সব দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুই বিদ্রোহী প্রার্থীকে তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করেছি। তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’