রাজশাহীর মুন্ডুমালায় পানির জন্য উভয় সংকট

পানি সরবরাহব্যবস্থা অচল। ব্যক্তিমালিকানাধীন পাম্প দিয়ে তোলা পানি ব্যবহার করতে হয় বাসিন্দাদের। গতকাল মুন্ডুমালা পৌরসভার সাদিপুর মহল্লায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা এমন একটি পৌরসভা, যেখানে বাসিন্দাদের প্রধান সমস্যা হলো পানির সংকট। রাস্তাঘাট বেহাল থাকলেও পানিসংকটের সমাধান এবারের নির্বাচনে পৌরবাসীর প্রধান দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, পৌর সদরে পানির স্তর ৬০০ ফুটের বেশি নিচে নেমে গেছে। খরা মৌসুমে এ সংকট আরও প্রকট হয়।

নির্বাচন ঘিরে জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি–দাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এসব কথা বলেন মুন্ডুমালা পৌর এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে যখন এসব বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল, তখন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতির কথা প্রচার করা হচ্ছিল বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারণার মাইকে।

উচ্চ স্বরে বাজানো মাইকের শব্দে বিরক্ত হয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাদিপুর পূর্ব পাড়া এলাকায় গৃহবধূ খায়রুন্নেসা বলে ওঠেন, ‘উন্নয়ন শুধু মাইকিংয়ে, কাজে নাই। পানি নাই, ভালো রাস্তা নাই। নামেই এটা পৌরসভা।’

মুন্ডুমালায় পৌরসভা নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি। এলাকার সমস্যা নিয়ে স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা বলেন, মুন্ডুমালা পৌর এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচুতে। ভূগর্ভস্থ পানি তুলে ধান চাষ করার কারণে পানির স্তরে অনেক নিচে নেমে গেছে। পৌর এলাকার কোনো কোনো মহল্লায় স্বল্প গভীরতায় পানির স্তর পাওয়া যায়। মহল্লাবাসী সেসব এলাকায় ‘সাবমারসিবল পাম্প’ বসিয়ে পানি তোলেন। প্রতিবেশীরা টাকা দিয়ে সেই পানি কিনে নেন। পানি নিয়ে এমন সমস্যার সমাধানে সরবরাহব্যবস্থা চান তাঁরা।

আবার পৌর এলাকার পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। ফলে বর্ষায় এ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সব প্রার্থীর প্রচার মাইক থেকে পৌরবাসীকে নাগরিক সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু অতীতে কোনো মেয়রই সুবিধা দিতে পারেননি।

উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের ছয়টি ও পাচন্দর ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে ২০০২ সালে মুন্ডুমালা পৌরসভা গঠন করা হয়। ২০১১ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে মেয়র হয়েছেন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী। এবার তিনি প্রার্থী হননি। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র-১ আমির হোসেন। তিনি পৌরসভার প্রথম নির্বাচন থেকে বরাবর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

গতকাল ৫ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, পানিনিষ্কাশনে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। ড্রেন পৌর ভবন থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। ড্রেনের ভেতরে আবর্জনার স্তূপ। সাদিপুর পূর্বপাড়ায় রাস্তার ধারে ট্যাপের পানিতে গোসল করছিলেন এক যুবক। তিনি বলেন, মনে করবেন না যে এই পানি পৌরসভার পাইপ থেকে আসে। তাঁরা নিজেরাই সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে পানি তুলে ব্যবহার করেন।

দেখা গেল, ওই ট্যাপের গোড়ায় একটি পাইপের মাথা ভেঙে পড়ে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই যুবক বলেন, এই ভাঙা পাইপই পৌরসভার। কিন্তু তাতে কোনো দিন পানি আসেনি।

এলাকার উন্নয়নের বিষয়ে এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী আমির হোসেন বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে পানির সমস্যা থাকবে না। সরবরাহব্যবস্থাতেই পানি আনা হবে।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান। বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন মুন্ডুমালা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কবীর। এলাকার সমস্যার বিষয়ে কথা বলতে গেলে দুজনই সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। ফিরোজ কবীর বলেন, জিতলে এলাকার গুরুজনদের সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নকাজ করবেন তিনি।