পানির নিচে প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর ফসলের খেত

অধিক উচ্চতার জোয়ার ও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ডুবে গেছে আমন খেত। রোববার সকালে পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া গ্রামে।প্রথম আলো

কৃষক রফিকুল ইসলাম (৪০) তাঁর ৪০ শতাংশ খেতে প্রতিবছরের মতো গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির আবাদ করেছেন। দুই দিন ধরে খেত থেকে ফসল তুলে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন তিনি। ঠিক তখনই অধিক উচ্চতার জোয়ার ও প্রবল বৃষ্টিপাতে তাঁর খেত তলিয়ে গেছে। চার দিন ধরে পানির নিচে রয়েছে তাঁর খেতের ফসল। এই অবস্থায় পচতে শুরু করেছে সব সবজি। এই অবস্থায় তাঁর পুরো খেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
কৃষক রফিকুলের বাড়ি পটুয়াখালীর সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের কিসমত মৌকরন গ্রামে। রফিকুল জানান, ৪০ শতাংশ জমিতে পুঁইশাক, চুনা কুমার, করলা, শিম, বরবটির আবাদ করতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সবে খেত থেকে ফসল তুলে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন, এরই মধ্যে জোয়ারের পানি ও টানা বৃষ্টির পানিতে খেত তলিয়ে গেছে।

গত চার দিনের অধিক উচ্চতার জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে রফিকুলের মতো কয়েক হাজার কৃষকের ফসলি খেত তলিয়ে গেছে। জেলায় মোট ৬৪ হাজার ৭৮৩ হেক্টর ফসলি খেত পানিতে ডুবে রয়েছে বলে জানিয়েছে পটুয়াখালীর কৃষি বিভাগ। পানি উন্নয়ন বোর্ড পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, অমাবস্যার প্রভাবে চার দিন ধরে জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত শুক্রবার জোয়ারের সময় বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় মোট ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫৩ হেক্টর জমিতে আউশ, আমনসহ গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির আবাদ হয়েছে। গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এই চার দিনের প্রবল বর্ষণ ও অধিক উচ্চতার জোয়ারের পানিতে ৬৪ হাজার ৭৮৩ হেক্টর খেত ডুবে রয়েছে। জেলায় রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ৮৯ হাজার ৭০০ হেক্টরে। এর মধ্যে ডুবে রয়েছে ৩২ হাজার ১৫ হেক্টর। উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের আউশের আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর। এর মধ্যে ডুবে রয়েছে ২৪ হাজার ৯১৮ হেক্টর। গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি, পেঁপে ও পানের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১৭৫ হেক্টর। ডুবে রয়েছে ২ হাজার ৬৩০ হেক্টর।

জোয়ারের চাপ কমলেও প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে, তাই পানি কমছে না। দীর্ঘদিন এই অবস্থা থাকলে রোপা আমন নষ্ট হয়ে যাবে। নতুন করে আবার বীজতলা সংগ্রহ করে আবাদ করতে হবে।
মো. বায়তুল, কৃষক, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী

জেলার উপকূলীয় রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর ইউনিয়নের কাজীর হাওলা গ্রামের কৃষক মো. বায়তুল (৩৫) জানায়, তিনি এ বছর ১৫ একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। রোপা আমনখেত বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চার দিন ধরে ডুবে রয়েছে। জোয়ারের চাপ কমলেও প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে, তাই পানি কমছে না। দীর্ঘদিন এই অবস্থা থাকলে রোপা আমন নষ্ট হয়ে যাবে। নতুন করে আবার বীজতলা সংগ্রহ করে আবাদ করতে হবে।
ইউনিয়নের পশ্চিম নেতা গ্রামের কৃষক রুবেল হাওলাদার (৪৫) জানান, তাঁর ২০ একর জমির আউশ ফসল এখন কেটে ঘরে তোলার সময় হয়েছে। কিন্তু চার দিন ধরে খেত পানিতে ডুবে আছে। এর মধ্যেই ফসল কেটে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন তিনি। তবে পানি দ্রুত না সরলে তাঁর ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জুয়েল জানান, কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। খেত থেকে পানি সরানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপপরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, অমাবস্যা ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অধিক উচ্চতার জোয়ারের পানি ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ফসলের খেত প্লাবিত হয়েছে। রোপা আমনের ক্ষতি হলে কৃষক নতুন করে আবাদ করে পুষিয়ে নিতে পারবেন। তবে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যাবে।