পাবনার ইছামতী নদীতে উচ্ছেদ ও খননে ধীরগতি, পাউবো কার্যালয় ঘেরাও

হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পাবনার ইছামতী নদী পুনঃখনন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম বাস্তবায়নের দাবিতে পাবনা পাউবো কার্যালয় ঘেরাও করেছেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার সকালে
ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনা জেলা শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী দীর্ঘদিনের দখল-দূষণে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীটি দখলমুক্ত করে খননের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন জেলাবাসী। জেলাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি নদীর দুই পারে উচ্ছেদ অভিযান ও খননকাজ শুরু হলেও অজ্ঞাত কারণে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ফলে আবারও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন আন্দোলনকারীরা। আজ বুধবার সকালে তাঁর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি দিয়েছেন।

ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পাবনা জেলা শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচি থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিএস রেকর্ড অনুসারে দ্রুত নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের দাবি তোলা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, দ্রুত সময়ে নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খনন না করা হলে, এ কাজের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে গত ৩১ মে একই দাবিতে আন্দোলনকারীরা পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা পাউবো কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে তাঁরা কার্যালয়টি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এক কর্মসূচিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইছামতী নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের দাবি তুলে বিভিন্ন পোস্টার-ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শহরের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা কর্মসূচিতে অংশ নেন।

কর্মসূচি চলাকালে ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলন কমিটির সভাপতি এস এম মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আবদুর রহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুর রহমান, ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, শিক্ষক এনামুল হক, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

একদিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে খননে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। দরপত্র অনুযায়ী খননে সাত ফুট নদী গভীর করার থাকলেও কম করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে উচ্ছেদ ও খননের জন্য যে টাকা বরাদ্দ আছে, তা ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এস এম মাহবুব আলম, সভাপতি, ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলন কমিটি

বক্তারা বলেন, দুই পারের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে ইছামতী নদী খনন এখন জেলাবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন–সংগ্রাম চলছে। দাবির পক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা একাত্ম হয়েছে। নদী রক্ষায় উচ্চ আদালত সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর দুই পারের দখলদার উচ্ছেদ ও খননের নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সরকার ইছামতী নদীর বাংলাবাজার ব্রিজ থেকে শ্মশানঘাট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার নদীর দখলদার উচ্ছেদের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা এবং খননের জন্য ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকায় নদীর কিছু অংশ উচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু গত ৩০ মার্চ বাকি অংশ উচ্ছেদ অভিযান শুরুর তিন দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আবার জেলাবাসীর মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে উচ্ছেদকৃত অংশে নির্দেশনা অনুযায়ী খনন না করে দায়সারাভাবে খননকাজ চালানো হচ্ছে। এটা কোনো অবস্থাতেই জেলার সচেতন মানুষ মেনে নেবেন না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আবদুর রহিম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও জেলা পাউবো ইছামতী নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের তত্ত্বাবধান করছে। আমরা চাই তারা জেলাবাসীর দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান ও খননকাজ করবে। অন্যথায় নদী রক্ষায় আমরা আরও বৃহৎ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলন কমিটির সভাপতি এস এম মাহবুব আলম বলেন, ‘একদিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে খননে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। দরপত্র অনুযায়ী খননে সাত ফুট নদী গভীর করার থাকলেও কম করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে উচ্ছেদ ও খননের জন্য যে টাকা বরাদ্দ আছে, তা ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই আমরা দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা ও সঠিকভাবে দ্রুত সময়ে খননের দাবি করছি।’

বিক্ষোভ ও আলোচনা পর্ব শেষে আন্দোলনকারীরা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই। হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী ইছামতী নদীর দুই পারের দখলদার উচ্ছেদ ও খনন করা হবে। খননকাজে কোনো অনিয়ম করা হলে সেটিও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করছি, শিগগিরই নদীর বাকি অংশে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে খনন শুরু করা হবে।’