পাবনার ইছামতীর দখলদারদের উচ্ছেদের ঘোষণা

পাবনা জেলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছমতী নদী দখল-দূষণে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর দুই পার দখল করে তৈরি হয়েছে কাঁচা-পাকা ঘর ও একতলা-দোতলা ভবন।

জেলাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কিছুদিন ধরে দখলদার উচ্ছেদের পদক্ষেপ নিলেও নানা আইনি জটিলতায় তা বন্ধ হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ৩১ মার্চ ইছামতীর দুই পারের দখলদার উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে। আজ রোববার বিষয়টি জানিয়ে জেলা শহরে মাইকিং করা হয়েছে। মাইকিংয়ে ৩০ মার্চের মধ্যেই নদীর দুই পার থেকে দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের শিবরামপুর থেকে পৌর এলাকার শালগাড়িয়া শ্মশানঘাট পর্যন্ত পাাঁচ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট নদী দখল হয়ে গেছে। ২০০৩ সালে জেলা প্রশাসন নদীর এই এলাকায় ২৮৫ জন দখলদারকে চিহ্নিত করে। দখলদারদের মধ্যে আইনজীবী, ব্যাবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ রয়েছেন। দখলের তালিকায় ১০৭টি সেমিপাকা বাড়ি, ১৬ টিনশেড বাড়ি, ৪৫টি একতলা ভবন, ১৮টি দোতলা ভবন ও ৮টি তিনতলা ভবন রয়েছে। বাকি দখলদারেরা দোকান, বাড়ির সীমানাপ্রাচীরসহ বিভিন্নভাবে ইছামতী দখল করেছেন। ফলে নদীটি রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পাউবো কিছুদিন ধরেই এসব দখলদার উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর শিবরামপুর থেকে জেলা শহরের লাইব্রেরি বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় নদীর দুই পাড়ের দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতায় নদীর বাকি অংশের দখলদার উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত ১০ মার্চ জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক পুনরায় নদীর দখলদার উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। ৩১ মার্চ উচ্ছেদ অভিযানের দিন ধার্য করা হয়েছে। এদিন জেলা শহরের লাইব্রেরি বাজার থেকে শালগাড়িয়া শ্মশানঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার নদীর দুই পারের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ শুরু হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘ইছামতী নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খনন জেলাবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ফলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সিএস ম্যাপ অনুযায়ী ইছামতীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই দখল করা এলাকা শনাক্ত হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়েই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। এর আগেই যাঁরা নদীর জায়গায় আছেন, তাঁরা নিজেরাই সরে যাবেন বলে আশা করছি।’

ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলন কমিটির সভাপতি এস এম মাহবুব আলম বলেন, ইছামতী নদী রক্ষার দাবিতে জেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন–সংগ্রাম করছেন। এই উচ্ছেদ অভিযানের মধ্য দিয়ে জেলাবাসীর সেই দাবি পূরণ হবে। ফলে উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে ও দ্রুত অভিযান শেষ করে নদী খননের দাবিতে ৩১ মার্চ জেলা শহরের লাইব্রেরি বাজার সড়কে একটি মানববন্ধন হবে। শহরের সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেবেন বলে আশা করছি।