পাবনার তিন পৌরসভা: বাড়িতে হামলা, প্রচারণায় বাধার অভিযোগ বিএনপির

পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে টাঙানো হয়েছে পোস্টার। বৃহস্পতিবার সাঁথিয়া উপজেলা সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই পাবনার ঈশ্বরদী, ফরিদপুর ও সাঁথিয়ায় প্রচারণায় বাধা ও হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈশ্বরদীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে জানালা, দরজার কাচ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে বিএনপির এ অভিযোগ ‘গতানুগতিক’ দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রচার-প্রচারণায় কর্মী না পেয়ে বিএনপি এমন অভিযোগ তুলেছে।

ঈশ্বরদী পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, প্রচারণার শুরু থেকেই তাঁরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার ছেঁড়া হয়েছে। মাইকিংয়ে বাধাসহ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা প্রচার-প্রচারণায় পদে পদে বাধা দিচ্ছেন। তাঁকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত এসে তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। তারা ইটপাটকেল ছুড়ে বাড়ির জানালা-দরজা ভেঙে দিয়েছে। এতে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইছাহাক আলী মালিথা বলেন, বিএনপির প্রতিটি অভিযোগ গতানুগতিক। তাঁরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে প্রচার-প্রচারণায় কর্মী পাচ্ছেন না। তাঁদের বাড়িতে কেউ হামলাও করেনি। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপির প্রার্থী বিভিন্ন ধরনের নাটক সাজাচ্ছেন।

হামলার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কিছু দুষ্টু ছেলে ওই বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ইট ছুড়েছে। এতে বাড়ির একটি জানালার কাচ ভেঙেছে। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সাঁথিয়া পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া) আসনের সাংসদ শামসুল হক এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অজুহাতে নির্বাচনী এলাকায় এসে প্রভাব বিস্তার করছেন ও ভোট চাইছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জনসভায় উপস্থিত হয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এ ছাড়া তাঁর ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আসিফ শামস নিজের বাহিনী নিয়ে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে নিষেধ করছেন। এতে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। এ–সংক্রান্ত অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।

সাংসদ শামসুল হক বলেন, বিএনপির প্রার্থীর কোনো অভিযোগই সঠিক নয়। মিথ্যা অভিযোগের পুরোনো সংস্কৃতি থেকেই বিএনপির নেতারা এসব অভিযোগ করছেন। দলীয় কর্মসূচি ও সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি কয়েকবার সাঁথিয়া গেছেন। সাধারণ মানুষ এগিয়ে এলে তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলেছেন। তবে তা আচরণবিধি ভঙ্গ করে নয়, প্রভাব বিস্তার করেও নয়।

প্রচারণায় বাধার একই অভিযোগ তুলেছেন ফরিদপুর পৌরসভার বিএনপি প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুমকি আসছে। তবে আমরা থেমে নেই। সব উপেক্ষা করেই নির্বাচনে টিকে থাকতে চাই। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে ধানের শীষই জিতবে।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ বলেন, বিএনপি প্রার্থীকে কোনো হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি। বিএনপি অভিযোগের জন্য অভিযোগ করেছে। তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই প্রচারণা চালিয়েছে। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পৌরবাসী নৌকার সঙ্গে আছেন। তাই নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপি প্রার্থী আবোলতাবোল বলছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি পৌরসভাতেই প্রার্থীরা শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কোনো পৌরসভাতেই কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সাঁথিয়ায় সাংসদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সে বিষয়ে নির্বাচনে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জানানো হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা মিললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে পাবনার পাঁচটি পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে সুজানগর পৌরসভায় মামলা জটিলতায় ১৬ তারিখের পরিবর্তে ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র গোলাম হাসনায়েন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। পৌরসভাটিতে শুধু কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ হবে।