পাবনায় উৎকণ্ঠা ছাপিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট, প্রার্থীদের সন্তোষ

উৎসবমুখর পরিবেশে পাবনা পৌর নির্বাচনের ভোট দিতে আসেন বয়স্ক মানুষেরাও। শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় পাবনা শহরের রাধানগর ইছামতী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

প্রচারণার শেষ দিন শহরে দুই দল যুবকের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ পাবনা পৌরসভা নির্বাচনে উত্তাপ ছড়িয়েছিল। তবে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির ফলে ভোটের দিনের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর। আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ভোট গ্রহণে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রার্থীরাও নির্বাচনের পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করে ফল মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

পৌর এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের একজন প্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়া ১৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৭৪ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রচারণার শুরু থেকেই তাঁরা সমান তালে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা চালিয়েছেন। এতে নির্বাচনের মাঠ ছিল উৎসবমুখর।

এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার প্রচারণার শেষ দিনে পৌর এলাকায় কয়েকটি স্থানে দুই দল যুবকের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সাধারণ ভোটাররা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু ভোটের আগের রাত থেকেই পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতায় নির্বাচনের পরিবেশ পাল্টে যায়। সকালে ভোট শুরুর পর থেকে ভোটাররা কেন্দ্রে এসে নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া শুরু করেন।

সরেজমিন নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে পুলিশের শক্ত অবস্থান। চলছে না কোনো যানবাহন। দোকানপাট বন্ধ। ভারী যান নিয়ে চলছে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ টহল। পাশাপাশি রয়েছে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পৃথক টহল। ভোটকেন্দ্রগুলোতেও পুলিশের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। সারি ধরে সুশৃঙ্খলভাবে তাঁরা ভোট দিচ্ছেন। ভেতরে সম্প্রীতির বন্ধনের মতো রয়েছেন সব মেয়র প্রার্থীর এজেন্টরা।

পাবনা পৌর নির্বাচনে সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভিড় করেন ভোটাররা। শনিবার সকাল আটটায় পাবনা শহরের রাধানগর ইছামতী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

বেলা সোয়া ১১টার দিকে পৌর এলাকার গোপালচন্দ্র ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল খালেক বলেন, পরিচ্ছন্ন ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। সকাল থেকেই ভোটারদের বেশ চাপ রয়েছে। তিন ঘণ্টায় প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাধানগর মজুমদার একাডেমির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পল্লব ইবনে শায়েখ বলেন, তিনিও নির্বিঘ্নে ভোট নিচ্ছেন। ওই সময় পর্যন্ত তাঁর কেন্দ্রে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

মধ্যশহরের সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রর সামনে থেকে ভোটার মো. আসাদুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন পর তিনি এমন ভোট দেখলেন। প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নিরপেক্ষ। সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোট হয়েছে। আবেগাপ্লুত স্বরে আফছার আলী নামের এক ভোটার বলেন, ‘বয়স তো মেলা হলো, এইরহম ভোট আগে দেহিনেই। হেই সুন্দর ভোট হইছে।’

ভোট গ্রহণ শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিএনপির প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মাসুম বলেন, প্রশাসন কথা রেখেছে। ভোট সুন্দরভাবেই হয়েছে। ফলাফল যা-ই হোক, তিনি মেনে নেবেন। তবে সুন্দর ভোট করার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

দিনভর একই সুরে কথা বলেছেন মেয়র পদের অন্য প্রার্থীরা। কোনো অভিযোগ ছিল না কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদেরও।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু ও আনন্দঘনভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কোনো অভিযোগও আসেনি।