পারাপারের অপেক্ষায় হাজারো যানবাহন, ফেরি চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা

নাব্যতা-সংকটে দুই দিন ধরে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। সংকট সমাধানে দুটি চ্যানেলে একাধিক খননযন্ত্র বসিয়ে পলি অপসারণ করা হলেও ঠিক কবে নাগাদ ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে, তা বলতে পারছে না কেউ। ফলে এই নৌপথে ফেরি চালু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এদিকে ফেরি চলাচলে নতুন একটি চ্যানেল (পালের চর) দিয়ে ফেরি চলাচলের একটি পথ বের করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রতিটি ফেরি ওই চ্যানেলে দিয়ে চলতে পারবে। তবে এই পথের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ এই নৌপথে ফেরি গেলে প্রতিটি ফেরি পারাপারে সাড়ে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সময় ব্যয় হবে। অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়ায় ওই পথে ফেরি ছাড়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ঘাট কর্তৃপক্ষ।

নাব্যতা-সংকটে কারণে দুই দিন ধরে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাটের উভয় পাড়ে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে। কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট, ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে।
প্রথম আলো

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ পালের চর দিয়ে ফেরি চলাতে বললেও তা অসম্ভব। দূরত্ব বেশির কারণে পারাপারে সাত-আট ঘণ্টা চলে যাবে। আবার নতুন এই পথে শিমুলিয়া থেকে ফেরি কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আসতে পারবে কিন্তু স্রোতে বড় ফেরিগুলো কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে শিমুলিয়া যেতে পারবে না। তাই এই পথে আমরা ফেরি চালাব না।’

তবে বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পালের চর নৌপথটি দিয়ে সব ধরনের ফেরি চলতে পারবে। আমরা ওই নৌপথটি মার্কিং করেছি। ওই পথে সময় বেশি লাগলেও ফেরি চালতে গিয়ে কোনো বাধায় পড়বে না। আর আগের পথের দুটি নৌ চ্যানেলে আমাদের ১৩টি খননযন্ত্র বসিয়ে পলি অপসারণের কাজ চলছে। আরও একটি উন্নত খননযন্ত্র বসানো হবে। আরও চার-পাঁচ দিন পলি অপসারণ করলে নৌ চ্যানেলটি আবার আগের মতো হয়ে আসবে।’

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ফেরিঘাট সূত্র জানিয়েছে, বর্ষার মৌসুমে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের বিকল্প নৌ চ্যানেল ও পদ্মা সেতুর চায়না চ্যানেলে ভয়াবহ ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। এই নৌপথে ফেরি না চালায় বিকল্প নৌপথে যানবাহনের চাপ সামলাতে তিনটি ফেরি পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে শাহ পরাণ ও এনায়েতপুরী নামে দুটি রো রো ফেরি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পাঠানো হয়। ভোলার নৌপথে পাঠানো হয়েছে কলমিলতা নামে আরও একটি রো রো ফেরি।

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক আছে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল। তবে নৌ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ঝুঁকি নিয়ে কয়েকটি ট্রলার যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করছে।

ট্রলারে শিমুলিয়া থেকে আসা যাত্রী হয়দার আলী বলেন, ‘প্রতি মোটরসাইকেলে ৫০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়েই এই ভাড়া দিচ্ছি। কারণ আমাদের ঘাট পার হতে হবে।’

ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় লঞ্চঘাটে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। কাঁঠালবাড়ি লঞ্চঘাট, ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে।
প্রথম আলো

এ সম্পর্কে ঘাটের নৌ পুলিশের পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের লোকবল খুবই কম। যা আছে লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে দায়িত্ব পালন করছে। সব স্থানে খবর রাখা সম্ভব হয় না। ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ। যদি ট্রলারে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারপার করে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটের তিনটি টার্মিনাল পুরোটাই ভর্তি পণ্যবাহী ট্রাকে। সংযোগ সড়কেও পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের লাইন। চলাচলরত ফেরিগুলো ঘাটের বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে রাখা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যাত্রীরা বাস থেকে নেমেই লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা পারাপার হচ্ছে। প্রতিটি লঞ্চ ও স্পিডবোটে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী। ঘাট থেকে কিছুটা দূরে ট্রলারেও যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছে।

মাদারীপুর থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ফেরি বন্ধ তাই বাধ্য হয়ে আমরা গাদাগাদি করে লঞ্চ পদ্মা পাড়ি দিচ্ছি। অনেকেই দ্রুত যাওয়ার জন্য স্পিডবোট ও ট্রলারে যাচ্ছে।’

১০ দিন ধরে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের টার্মিনালে আটকা পড়ে আছে পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মো. শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘যশোর থেকে মাল নিয়ে চট্টগ্রাম যাইতে হবে। দিনের পর দিন ঘাটে পড়ে আছি। এখানে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নাই। খাইতে ঘুমাইতে সব কাজে কষ্ট। এখন তো ফেরিই চলে না। কবে পার হতে পারব, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।’

জানতে চাইলে কাঁঠালবাড়ি ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘দুদিন ধরে ফেরি না চলায় আমাদের ঘাটে ৭০০ বেশি যানবাহন আটকা পড়েছে। শিমুলিয়া ঘাটেও একই অবস্থা। তবে আটকে পড়া যানবাহনের বেশির ভাগই পণ্যবাহী ট্রাক। এই নৌপথে নতুন করে মাইক্রোবাস বা ব্যক্তিগত গাড়ি তেমন আসছে না। যেসব যানবাহন ঘাটে আসে, তাদের আমরা বিকল্প নৌপথ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’