পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় মামলা হয়নি

নরসিংদীর মনোহরদীতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের পাল্টা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর।
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর মনোহরদীতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আমিনুর রশিদের উঠান বৈঠকে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা হয়নি। গত বুধবার রাতে উপজেলার হিন্দুপাড়ায় উঠান বৈঠকের হামলার পর একই রাতে মেয়র সমর্থকেরা পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ ওঠে।

দুটি হামলার ঘটনায় আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা করেনি বলে জানিয়েছেন মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় না আসায় মামলা হয়নি। তবে বর্তমান মেয়র আমিনুর রশিদ বলেছেন, আগামীকাল শনিবার নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হলে পরদিন তিনি মামলা করবেন।

গত বুধবার রাত ১০টার দিকে মনোহরদীর হিন্দুপাড়ায় আয়োজিত মেয়র প্রার্থীর উঠান বৈঠক শেষে বের হওয়ার সময় হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে মেয়র পক্ষের কয়েক শ কর্মী-সমর্থক মনোহরদী বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে ওই রাতেই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকেরা পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে হামলা ভাঙচুর চালায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মেয়রের উঠান বৈঠকটি শুরু হয়ে শেষ হয় ১০টার দিকে। বৈঠক শেষ হওয়ার পর হামলার ঘটনা ঘটে। বৈঠক শেষ করে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক। তাঁর প্রাইভেট কারের কাচ ভাঙচুর ও ৭ থেকে ৮টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন হামলাকারীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এর জেরে ওই রাতেই পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাল্টা হামলা করেন মেয়রের সমর্থকেরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুমন বর্মণ, কাউন্সিলর প্রার্থী খোকন রায় ও সুকোমল সাহার বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। হামলা চালানো হয় সুমন বর্মণের তিনটি ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিহির রায়ের দোকানেও। পরে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ রায়হান ও তাঁর সমর্থকদের বাড়িঘর ও অফিসে, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোতাহার হোসেনের অফিস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও হামলা চালানো হয়।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ মনোহরদী পৌরসভা নির্বাচনে তাঁর পছন্দের চারজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন দেন। কিন্তু মেয়র আমিনুর রশিদ তাদের সমর্থন না দেওয়ায় তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন মঞ্জুরুল মজিদ। এর জেরেই বুধবার রাতে উঠান বৈঠকে হামলার ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ বলেন, তিনি দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে। কিন্তু মেয়র আমিনুর রশিদ নিজের সুবিধার জন্য বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয়ী করতে চান। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে মেয়রের সমর্থকেরাই উঠান বৈঠক শেষে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর হামলা করেন।

পাল্টা হামলার বিষয়ে মেয়র প্রার্থী আমিনুর রশিদ বলেন, পাল্টা হামলার ঘটনার কোনো ভিত্তি নেই। যাদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের কথা বলা হচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারাই বলবে এটি মিথ্যা।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। যেহেতু ভুক্তভোগী একাধিক পক্ষ আছে, তাই পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় তারাই মামলা করবে। তবে পুলিশ পাল্টাপাল্টি হামলার সব কটি ঘটনা তদন্ত করে দেখছে।