পায়রা বন্দরের জন্য রাবনাবাদ চ্যানেল খনন প্রকল্পের উদ্বোধন

পায়রা বন্দরের জন্য রাবনাবাদ চ্যানেলের খননকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আজ শনিবার বিকেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়প্রথম আলো

পায়রা বন্দরের জন্য রাবনাবাদ চ্যানেল খনন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ‘অভ্যন্তরীণ ও বহির্নোঙরের জরুরি মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং’ শীর্ষক এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার এই বন্দর সরকারের একটি জাতীয় অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, ১৮ মাসব্যাপী এই ড্রেজিং কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থের রাবনাবাদ চ্যানেলের অভ্যন্তরীণ ও বহির্নোঙর খননকাজ চলবে। আনুমানিক ৯ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ঘনমিটার পলি অপসারণ করে চ্যানেলের ৬ দশমিক ৩ মিটার গভীরতা বজায় রাখা হবে। এ জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৭ দশমিক ৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ড্রেজিংকাজের চুক্তি মূল্য ৪০৮ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতিমধ্যে এই বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। এ ছাড়া বন্দরের সার্ভিস জেটি নির্মাণের কাজ চলমান। সংযোগ সড়ক ও আন্ধারমানিক নদের ওপর নির্মিত সেতুর মূল নির্মাণকাজ অতি শিগগির শুরু হবে। অদূর ভবিষ্যতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে রাবনাবাদ চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি করা হবে। এর ফলে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজ সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারবে।

রাবনাবাদ চ্যানেল খননের কাজ করছে বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুল। ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের সংযোগকারী পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম চ্যানেল সুয়েজ খাল খনন রয়েছে জান ডে নুলের অর্জনের খাতায়।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট পায়রা বন্দরের বহির্নোঙরে বাণিজ্যিক জাহাজ ভেড়ার মাধ্যমে সীমিত পরিসরে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দেশের এক নতুন অগ্রযাত্রা ওই দিনই শুরু হয়। ইতিমধ্যে এই বন্দরে ১০৬টি সমুদ্রগামী জাহাজ আগমন করেছে। এর মাধ্যমে সরকারের ২৫৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পায়রা বন্দরের জন্য রাবনাবাদ চ্যানেলের খননকাজের উদ্বোধন করেন। আজ শনিবার বিকেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়
প্রথম আলো

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মতো কিংবা তার চেয়েও বড় মেগা প্রকল্প আমরা আজ সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষম হয়েছি। রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংও নিজস্ব অর্থায়নে করার সাহসিকতা ও সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আমাদের এই সাহসের নাম শেখ হাসিনা। তাঁর স্বপ্নের পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ড্রেজিংয়ের কাজ আজ উদ্বোধন করা হলো।’

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রাবনাবাদ চ্যানেল খননের কাজ করছে বেলজিয়ামভিত্তিক পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুল। ১৯৫১ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে ড্রেজিংয়ের কাজ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের সংযোগকারী পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম চ্যানেল সুয়েজ খাল খননের একক কৃতিত্বে রয়েছে জান ডে নুলের অর্জনের খাতায়। এই কোম্পানি ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকাসহ বহু বন্দরে বৃহত্তর পরিসরে বিভিন্ন ড্রেজিং প্রকল্প সম্পন্ন করেছে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর হুমায়ুন কল্লোল, পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর এম মামুনূর রশীদ, সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমোডর রাজীব ত্রিপুরা, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কমান্ডার (অব.) এম রাফিউল হাসাইন, পরিচালক (প্রশাসন) মহিউদ্দিন আহমেদ খান, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন, পরিচালক (ট্রাফিক) মো. আতিকুল ইসলাম, হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন এস এম শরিফুর রহমান, উপপরিচালক (ট্রাফিক) মো. আজিজুর রহমান, বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুলের প্রতিনিধি, রাবনাবাদ চ্যানেল খননকাজের প্রকল্প পরিচালক মোয়েনস জ্যান প্রমুখ কর্মকর্তা।