পিচঢালাই দেওয়ার এক সপ্তাহে উঠে যাচ্ছে

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ- ডাকবাংলা-গান্না আঞ্চলিক সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সড়কের শ্রীরামপুর এলাকায়প্রথম আলো

পিচঢালাই দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে উঠে যাচ্ছে। বের হয়ে আসছে পুরোনো ইটের রাস্তা। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হচ্ছে ফাটল। কাজ করে যাওয়ার পর হাত দিলেই পিচঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা পাথরের গুঁড়ো উঠে আসছে। এ করুণ অবস্থা ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ-ডাকবাংলা–গান্না আঞ্চলিক সড়কের। এলাকাবাসী বাধা দেওয়ার ওই সড়কে পিচঢালাই দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা থেকে একটি আঞ্চলিক সড়ক বের হয়ে গেছে। সড়ক বিভাগের অধীন এই সড়কটি ডাকবাংলা বাজারে গিয়ে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে মিশেছে। ২৩ কিলোমিটার এই সড়কটি দীর্ঘদিন ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল। সম্প্রতি সড়কটি পুনর্নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০ কোটি টাকার এই কাজটি পেয়েছে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজটি করছে  ঝিনাইদহের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সড়কের পুরোনো পিচঢালাই উঠিয়ে ভাঙা স্থানগুলো সংস্কারের পর আবার পিচঢালাই দিতে হবে।

সড়কের শ্রীরামপুর এলাকায় প্রায় আধা কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে পিচঢালাই উঠে গেছে। পিচঢালাই উঠে যাওয়ায় উঁচু–নিচু হয়ে থাকায় বিভিন্ন স্থান দিয়ে যানবাহনে চলাচলের সময় ঝাঁকুনি খেতে হচ্ছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, সড়কটির কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা থেকে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের আনুমানিক চার কিলোমিটার কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। এর মধ্যে নিমতলা ও শ্রীরামপুর এলাকায় পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের শ্রীরামপুর এলাকায় প্রায় আধা কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে পিচঢালাই উঠে গেছে। যানবাহনের চাকার সঙ্গে উঠে আসছে পিচ। অধিকাংশ জায়গায় ফাটল ধরেছে। যেখান থেকে পিচঢালাই সরে গেছে সেখানে বের হয়ে আসছে নিচের ইট। পিচঢালাই উঠে যাওয়ায় উঁচু–নিচু হয়ে থাকায় বিভিন্ন স্থান দিয়ে যানবাহনে চলাচলের সময় ঝাঁকুনি খেতে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদার পিচঢালাই দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্য তা উঠে যাচ্ছে।

চাপালী গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কাজটি প্রথম থেকেই পরিকল্পনা করে করা হয়নি। কোথাও কোথাও উঁচু আবার কোথাও কোথাও নিচু রয়েছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের ওপর পানি জমবে। পিচের প্রধান শত্রু পানি। সড়কের ওপর এভাবে পানি জমে থাকলে দ্রুতই পিচ নষ্ট হয়ে যাবে। সড়ক নির্মাণের কাজে নিম্নমানের পিচ ব্যবহার  করা হয়েছে।

ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন স্থানীয় ওমর আলী। সড়কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখনই ভ্যানে যাওয়ার সময় ঝাঁকুনি খেতে হচ্ছে। অনেক স্থানে ফাটলের কারণে ঝাঁকুনি বাড়ছে। তাঁরা আশা করেছিলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও সড়কটি ভালো হচ্ছে। তাঁরা ভালোভাবে চলাচল করতে পারবেন। কিন্তু আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে সড়কটি। এতে তাঁদের কষ্ট আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার মিজানুর রহমান বলেন, নির্মাণের সময় বৃষ্টির কারণে ওই সমস্যা হয়েছিল। ওই স্থানের পিচঢালাই তুলে ফেলা হয়েছে। ওই স্থানের কাজ আবার করে দেওয়া হবে।

ওই সড়কের পিচঢালাই উঠে যাওয়ার বিষয়ে সওজের ঝিনাইদহ কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার জানান, কোন সমস্যায় এ ঘটনাটি ঘটেছে, তা তাঁরা পরীক্ষা করে দেখছেন। পাশাপাশি যে স্থানগুলোতে সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেখানকার পিচঢালাই উঠিয়ে পুনরায় কাজ করা হবে। ইতিমধ্যে তাঁরা ঠিকাদারকে আবার কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন।