পিবিআই কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ভাইরাল
নেত্রকোনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) কর্মরত এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এ–সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা হলেন ধনরাজ দাস। তিনি পিবিআই নেত্রকোনা শাখায় পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ফোনালাপে শোনা যাচ্ছে, একটি ভাঙচুর মামলার আসামিপক্ষের লোকের কাছ থেকে ওই কর্মকর্তা ঘুষ হিসেবে বেশ কিছু টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু কথামতো কাজ না হওয়ায় ঘুষদাতা তাঁর টাকা ফেরত চাচ্ছেন। আর ঘুষগ্রহীতা ধনরাজ দাস নেত্রকোনায় এসে টাকা ফেরত নিয়ে যেতে বলছেন। যিনি টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করছেন, তাঁর নাম আবুল হোসাইন।
শনিবার বিকেলে নেত্রকোনায় পিবিআই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এ–সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা হলেন ধনরাজ দাস। তিনি পিবিআই নেত্রকোনা শাখায় পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
অভিযোগকারী আবুল হোসাইনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পরিদর্শক ধনরাজ দাস তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে তিন দফায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এ–সংক্রান্ত সব তথ্যপ্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে।
আবুল হোসাইনের আবুল হোসাইনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পরিদর্শক ধনরাজ দাস তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে তিন দফায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এ–সংক্রান্ত সব তথ্যপ্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে ধনরাজের মুঠোফোনে শুক্রবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ময়মনসিংহে আছি। শনিবার নেত্রকোনায় এসে সরাসরি আপনার সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলব।’ শনিবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় যাচ্ছি, পরে এসে এ বিষয়ে কথা বলব।’ এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর আরও বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ জুলাই কেন্দুয়ার ডাউকি গ্রামের মসজিদের সামনে থেকে ওই গ্রামের সাবিজ মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কেন্দুয়া থানায় নিহতের বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।
তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুনকে। তিনি গত ৪ ডিসেম্বর সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ছয় দিন পর ১০ ডিসেম্বর ওই মামলার আসামি জিয়াউল ও পলাশের বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটে অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাই জুলহাস মিয়া গত ২০ জানুয়ারি কেন্দুয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার মালামাল লুট ও ভাঙচুর করার কথা উল্লেখ করে এসে আসামি করা হয় খুন হওয়া জুয়েলের মা ললিতা আক্তার, ভগ্নিপতি আবুল হোসাইনসহ ছয়জনকে।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নোমান সাদেকীন গত ২ ফেব্রুয়ারি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঘটনা মিথ্যা উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নোমান সাদেকীন গত ২ ফেব্রুয়ারি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঘটনা মিথ্যা উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। নোমান সাদেকীনের দেওয়া প্রতিবেদন বাদী প্রত্যাখ্যান করে পুনঃ তদন্তের আবেদন করায় আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান পরিদর্শক ধনরাজ দাস। তদন্ত শেষে গত ১৩ এপ্রিল তিনি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। তিনি এবার মিথ্যা মামলা করার বিষয়টি এড়িয়ে উল্লেখ করেন, রাতের আঁধারে মালামাল লুট হওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি।
পিবিআইয়ের কর্মকর্তা ধনরাজকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনা আবুল হোসাইনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সেকান্দরনগর গ্রামে। তিনি খুন হওয়া জুয়েল মিয়ার ভগ্নিপতি। ভাঙচুর, লুটপাটের অভিযোগে দায়ের করা মামলাটির প্রধান আসামি তিনি।
আপনার অফিসে গিয়া আমি টাকা দিয়া আসছি, আপনি এখন আমার বাড়িতে আইসা টাকাটা দিয়া যান।’ জবাবে অপর প্রান্ত থেকে শোনা যায়, ‘আপনি আসেন। মেম্বরকে নিয়ে বসে বিষয়টি শেষ করি। আমার নামে অভিযোগ দিয়ে ক্ষতি করে আপনার কি লাভ হবে? আপনি নেত্রকোনা এসে নিয়ে যান
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফোনালাপের অডিও ক্লিপে আবুল হোসাইনকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার অফিসে গিয়া আমি টাকা দিয়া আসছি, আপনি এখন আমার বাড়িতে আইসা টাকাটা দিয়া যান।’ জবাবে অপর প্রান্ত থেকে শোনা যায়, ‘আপনি আসেন। মেম্বরকে নিয়ে বসে বিষয়টি শেষ করি। আমার নামে অভিযোগ দিয়ে ক্ষতি করে আপনার কি লাভ হবে? আপনি নেত্রকোনা এসে নিয়ে যান।’ তখন আবুল বলেন, ‘আমি নেত্রকোনা আসতে ভয় পাই। আমি টাকা দিয়েছি, আপনি টাকা নিয়েছেন। আমার টাকা বাড়িতে এসে ফেরত দিয়ে যান।’ এভাবেই ৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডে উঠে আসে ঘুষের টাকার লেনদেনের বিষয়টি।নিচের অডিও ফিাইলটি সংগৃহীত।
ধনরাজ দাসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা পিবিআই কার্যালয়ের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই ও অনুসন্ধান তদন্ত করে সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে তবে ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া দুটিই অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’