পিস্তল হাতে সাংসদের ছবি ফেসবুকে

বগুড়া-৭ আসনের সাংসদ রেজাউল করিমের অস্ত্র হাতে এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে
সংগৃহীত

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের আলোচিত সাংসদ রেজাউল করিম বাবলুর পিস্তল হাতে তোলা একটি ছবি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কালো রঙের নতুন ঝকঝকে পিস্তল হাতে হাসিমুখে তোলা তাঁর ছবিটি নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।

তবে সাংসদ রেজাউল করিম দাবি করেছেন, নিরাপত্তার জন্যই তিনি অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন। সপ্তাহখানেক আগে রাজধানীর একটি অস্ত্রের দোকান থেকে তিনি ৮০ হাজার টাকায় একটি বিদেশি পিস্তল কিনেছেন। দোকানে বসে পিস্তল নাড়াচাড়া করার সময় তাঁর সঙ্গে থাকা কোনো কর্মী মুঠোফোনে ছবি তুলে তা তাঁদের ফেসবুক ওয়ালে আপলোড দিয়েছেন। সাংসদ বলেন, লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড দিতে আইনি কোনো বাধা নেই। তাঁর সঙ্গে থাকা কোনো কর্মী তাঁকে না বলেই ফেসবুকে দিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আর তাঁকে অপছন্দ করা কিছু সাংবাদিক এই ছবি ভাইরাল করে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

একজন সাংসদের অস্ত্র প্রদর্শনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়াটা অত্যন্ত অশোভন কাজ। নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র জনসমক্ষে প্রদর্শন করাটা অত্যন্ত হীন অভিব্যক্তির প্রতিফলন।
বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক

সাংসদের অস্ত্র হাতের ছবিটি ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে–বিপক্ষে নানা আলোচনা–সমালোচনা হয়। গাবতলী উপজেলার ভোটার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাহানুর সাকিল বলেন, একজন আইনপ্রণেতা হয়ে ফেসবুকে তিনি (সাংসদ) অস্ত্র প্রদর্শন করছেন। এটা শুধু ‘হঠাৎ ক্ষমতাধর’ বনে যাওয়া একজন ব্যক্তির ক্ষমতার দাপট দেখানোই নয়, জনগণের কাছে নিজেকে ‘অস্ত্রধারী ক্ষমতাধর’ জাহির করা। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর রাতারাতি গাড়ি, বাড়ি, অস্ত্র কেনার অর্থের উৎসও খতিয়ে দেখা দরকার।

টিআইবির নাগরিক সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বগুড়ার সভাপতি মাসুদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র হাতে তোলা সাংসদ রেজাউল করিমের ছবি ফেসবুকজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বৈধ অস্ত্র হলেও একজন সাংসদের এভাবে অস্ত্র প্রদর্শন কোনোক্রমেই শোভনীয় নয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, একজন সাংসদের অস্ত্র প্রদর্শনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়াটা অত্যন্ত অশোভন কাজ। নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র জনসমক্ষে প্রদর্শন করাটা অত্যন্ত হীন অভিব্যক্তির প্রতিফলন, এ ধরনের অশোভন কাজ গণতন্ত্র ও সুশাসনের অন্তরায়। বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, জনগণ তাঁকে ভোট দিয়েছেন জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য, অস্ত্র কেনার জন্য নয়। একজন সাংসদের নিরাপত্তার জন্য বড় শক্তি হওয়া উচিত জনগণ, জনগণই সব শক্তির উৎস, জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থনই বড় শক্তি। সাংসদ নির্বাচিত হয়ে অস্ত্র কিনে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত অবিবেচক কাজ।

এ বিষয়ে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ রেজাউল করিমের নামে কয়েক মাস আগে একটি পিস্তলের লাইসেন্স প্রদানের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন তাঁকে পিস্তলের লাইসেন্স দিয়েছে কি না, তা জানা নেই।

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ রেজাউল করিম অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রদর্শন অশোভন।

রেজাউল করিম ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসন থেকে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন। নির্বাচনে রেজাউল করিম তাঁর হলফনামায় পেশা সাংবাদিকতা ও ব্যবসায় বলে উল্লেখ করেছেন। তবে সাংবাদিকতা থেকে তিনি কত টাকা আয় করেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তাঁর হলফনামায় এবং আয়কর বিবরণীতে নেই। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। তবে কৃষি ও ব্যবসা থেকে তাঁর আয় উল্লেখ করেছিলেন যথাক্রমে তিন হাজার ও দুই হাজার টাকা। তাঁর নির্বাচনী খরচ সাড়ে ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা থেকে আয় ৫০ হাজার টাকা আর তাঁর দুই জামাতার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা এবং দান হিসেবে আরেক জামাতার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধার নেওয়ার কথা তিনি উল্লেখ করেছিলেন।