পুকুর খননের মাটি ভাটায়

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদার স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছে মাটি বিক্রি করছেন।

নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের পুকুর পুনঃখননের মাটি ট্রাকে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। গত শনিবার সকালে
ছবি: মাসুদ আলম

যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খননে ব্যয় প্রায় ২৯ লাখ টাকা। এদিকে বেআইনিভাবে ওই পুকুর খননের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, পুকুর খননের ওই মাটি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদার স্থানীয় এক মাটি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করছেন। তাঁর হাত ঘুরে মাটি যাচ্ছে পাশের দুটি ইটভাটায়। ট্রাকে করে ওই মাটি পরিবহন করায় ইট বিছানো একটি গ্রামীণ সড়ক ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ সম্পর্কে এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর্জা ইফতেখার আলী প্রথম আলোকে বলেন, পুকুর পুনঃখননের মাটি দিয়ে পুকুরপাড় বাঁধতে হবে। এরপর মাটি উদ্বৃত্ত থাকলে তা কলেজের কাজে ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ওই মাটি বিক্রি করা যাবে না। ঠিকাদার যদি মাটি বিক্রি করে থাকেন, তবে তার দাম নির্ধারণ করে ঠিকাদারের টাকা থেকে তা কর্তন করা হবে।

মাটি বিক্রির বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল হাসান। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারকে সিডিউল অনুযায়ী পুকুর খনন করে দিতে বলেছি। মাটি কোথায় রাখবে, সেটা তাঁর ব্যাপার। মাটি যদি ইটভাটায় যায়, তাহলে সেটা আমার অজ্ঞাতে। কলেজের পেছনে নিচু জায়গা আছে। মাটি দিয়ে সেটা ভরাট করা যেত। কিন্তু আমার মাটি পরিবহনের টাকা নেই।’

অভয়নগর এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের পুকুর পুনঃখনন ও ঘাট নির্মাণে ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৬ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। ২৮ লাখ ৮৪ হাজার ১৪৮ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজ পেয়েছে ঝিনাইদহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহরিয়ার কনস্ট্রাকশন। গত বছরের ১৬ মার্চ কাজটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। ঠিকাদার কাজ শুরু করেন চলতি মাসের ১ ফেব্রুয়ারি।

নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কয়েকটি ধানখেত। ধানখেতের শেষ প্রান্তে একটি মেহগনিবাগানের মধ্যে পুকুরটির অবস্থান। গত শনিবার পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে পুকুরের মাটি কাটার কাজ চলছে। পুকুরটির পুনঃখনন প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূর্ব পাশে পুনঃখননের কাজ চলছে। পুকুরের চারপাশে পাড়ে মাটি স্তূপ করে রাখা। দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে ট্রাক পুকুরে নামার জন্য মাটি দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এক্সকাভেটর দিয়ে পুকুর থেকে মাটি কেটে ট্রাকে ভর্তি করা হচ্ছে।

ট্রাকচালক মো. আরিফ বলেন, ‘১০ দিন ধরে পুকুর থেকে ট্রাকে করে মাটি ভাটায় দিচ্ছি।’ আরেক ট্রাকচালক মো. রকি বলেন, ‘প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ ট্রাক মাটি ভাটায় দিচ্ছি।’

অভয়নগর উপজেলার বুইকরা গ্রামের আবদুর রাজ্জাক বলেন, পুকুর থেকে ট্রাকে করে ভাটায় মাটি নিতে ইটের রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে।

সেখান থেকে মাটি কিনে ইটভাটায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি ট্রাক মাটি ২০০ টাকায় কিনেছেন। সাড়ে পাঁচ টাকা বর্গফুট দরে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। ঠিকাদারের কাছ থেকে মাটি কিনেছেন। এ পর্যন্ত ৩০০ ট্রাক মাটি নেওয়া হয়েছে। ট্রাকে করে মাটি নেওয়ায় রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। রাস্তা ঠিক করে দেবেন তিনি।

তবে ঠিকাদার মোসাব্বির হোসেন বলেন, তিনি মাটি বিক্রি করছেন না। পুকুরপাড়ে মাটি রাখার জায়গা নেই। যাঁর প্রয়োজন হচ্ছে, তিনি মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। মাটি ইটভাটায় যাচ্ছে কি না, তা তাঁর জানার দরকার নেই।

উপজেলা প্রকৌশলী শ্যামল কুমার বসু বলেন, খবর পেয়ে রোববার থেকে সেখানে খননকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।