পুঠিয়ায় আঙুলের ছাপ মিলছে না অনেক কেন্দ্রে, সাংবাদিকদের বাধা

রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মলেজানের মতো অনেক প্রবীণ নাগরিক ভোট দিতে কেন্দ্রে যান। সোমবার পুঠিয়া পৌরসভার গণ্ডগোহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। আজ সোমবার সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১ শতাংশ ভোট পেড়েছ বলে বলা হচ্ছে। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে প্রার্থীসহ অনেক ভোটারের আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) না মেলায় তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। তাঁদের ফের বিকেলে ভোট দিতে বলেছেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভায় মেয়র পদে তিনজন নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রবিউল ইসলাম ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আল মামুন খান সকালে সাড়ে নয়টার দিকে গণ্ডগোহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়েছেন। নারকেলগাছ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম আজম নয়ন ভোট দিয়েছেন পুঠিয়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে ধানের শীষের প্রার্থী আল মামুন খান অভিযোগ করেছেন, কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকেরা তাঁর এজেন্টদের বের করে দিতে চেয়েছিল। পরে গিয়ে তিনি ঠিক করে দিয়েছেন।

সকালে পৌরসভার ২ নম্বর গণ্ডগোহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন ভোটার ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বলতে থাকেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। তাঁদের দুপুরের পর আবার কেন্দ্রে যেতে বলেছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

ওই কেন্দ্রের ভোটার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় তিনি ভোট দিতে পারেননি। তাঁর হাতে কোনো সমস্যা নেই। একই কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডালিম প্রতীকের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মো. দুলাল মিয়াকে। তিনি বলেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় তিনি ভোট দিতে পারেননি। একজন প্রার্থী হিসেবে ভোট দিতে না পেরে হতাশ তিনি। তিনি বলেন, ‘আরও বহু মানুষ ভোট দিতে পারেননি। তাঁরা কি আর ভোট দিতে আসবেন?’

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় কিছুসংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। তাঁদের বেলা তিনটার দিকে আসতে বলা হয়েছে। তাঁদের সবার ভোট নেওয়া হবে। কেউ ভোট না দিয়ে যাবেন না।

ভেতরে দ্রুত হয়, লাইন এগোয় না

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালহাটি এলাকার শিশু একাডেমিতে সবচেয়ে বেশি ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে। এখানে নারী ভোটারদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ভোট দেওয়ার পর অনেকেই বলেছেন, ভেতরে খুব অল্প সময়ে ভোট হয়, কিন্তু লাইন এগোয় না কেন? ওই কেন্দ্রে দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন সালমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার ভোট দিতে সময় লাগল ২০ থেকে ২৫ সেকেন্ড।

আরও অনেকেরই একই রকম সময় লেগেছে। কিন্তু লাইনে বেশি সময় থাকতে হয়েছে।’

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আতিকুজ্জামান বলেন, অনেক নারী ভোটার রয়েছেন, তাঁরা ভেতরে ঢুকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না। আর ইভিএমে এখানে ভোট হচ্ছে প্রথম। তাই একটু দেরি হচ্ছে। আবার অনেক অসুস্থ ও বৃদ্ধদের আগে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

সাংবাদিক প্রবেশে বাধা

এই পৌরসভার নয়টি কেন্দ্র ঘুরে কয়েকটি কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা পাওয়া গেছে। কিছু কেন্দ্রে পুলিশ সরাসরি বাধা দিয়েছে আর কিছু কেন্দ্রে পুলিশ ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাধা দিয়েছেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পালোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিক দেখা মাত্রই এক পুলিশ সদস্য বলে ওঠেন, ‘ক্যামেরা ভেতরে রাখেন। আর ৩০০ গজের বাইরে থাকেন।’ পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. নূরে আলম বলেন, সাংবাদিক ও ক্যামেরা কেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না। এর আগে সকালে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পিএন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এক পুলিশ সদস্য সাংবাদিক পরিচয় জানার পরও বাধা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বাইরে বের হতে বলেন। পরে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কেন্দ্রে সাংবাদিক ঢুকতে পারবেন বলে জানালে ওই পুলিশ সদস্য সেখান থেকে সরে যান।

রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক প্রবেশে কোনো বাধা নাই। যদি কেউ বাধা দিয়ে থাকেন, তবে সেটা ঠিক হয়নি।