পুনর্বাসন প্রকল্পের ২৭টি ঘর রাতে দখল, দুপুরে উচ্ছেদ করলেন ইউএনও

ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা ইউনিয়নের হাড়দ্দহ গ্রামে নির্মিত ২৭টি ঘরপ্রথম আলো

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা ইউনিয়নের হাড়দ্দহ গ্রামে নির্মিত ২৭টি ঘর রাতের আঁধারে দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বদলিজনিত কারণে চলে যাচ্ছেন, এমন খবরের ভিত্তিতে স্থানীয় একটি দালাল চক্র দলিল করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় ভূমিহীন লোকজনকে এসব ঘর দখল নিয়ে দেয়।

যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলছেন, আজ শুক্রবার তাঁর হস্তক্ষেপে ও পরবর্তী সময়ে ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে দখলকারী ভূমিহীনেরা ঘরের দখল ছেড়ে চলে গেছেন।

এই ২৭টি ঘরের দলিল বিশেষ ব্যবস্থাপনায় শনিবার রেজিস্ট্রি করে রোববার সদ্য বদলি হওয়া জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের উদ্বোধন করার কথা।

সাতক্ষীরা সদর ইউএনওর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা ইউনিয়নের হাড়দ্দহ গ্রামে প্রথমে ১ লাখ ৭০ হাজার এবং পরে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘর নির্মাণের বরাদ্দ পান শ্যামনগরের ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম। ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেন ১ হাজার ৬০০ ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তি। যাচাই–বাছাই শেষে তালিকাভুক্ত করা ৪৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে। এর মধ্যে ২০ জনকে গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল করে দেওয়া হয়। বাকি ২৭টি দলিল বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আগামীকাল শনিবার দলিল রেজিস্ট্রি করে রোববার ওই ঘরের উদ্বোধন করবেন সদ্য বদলি হওয়া জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল।

শাঁখরা বাজার কমিটির সহসভাপতি আসাদুজ্জামান পলাশ, স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, মফিজুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, ভোমরা ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের সংখ্যা অনুযায়ী ৪৭টি ঘর খুবই নগণ্য। সে কারণে ঘর না পাওয়া ভূমিহীনেরা অনেকেই হতাশ ছিলেন। গুচ্ছগ্রামের মমতাজ, তাঁর ছেলে আবদুর রহমান, রোমিছা, শাহজাহান, আফছার আলী, আবদুল কাদের, গয়েশপুরের আবদুর রব, বৈচানা গ্রামের মোজাহারের ছেলে চানবাবু, তাঁর বোন খাদিজা, ফুফু আলেয়া, খানবাড়ির ফিরোজাসহ ২৭টি ভূমিহীন পরিবার বৃহস্পতিবার রাতে দলিল না হওয়া ওই ২৭টি ঘর দখলে নেন। ঘরের মধ্যে তাঁরা মালামাল নিয়েও আসেন বসবাসের জন্য।

ভূমিহীনেরা চলে যাওয়ার পরপরই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কান্তিলাল সরকার ওই সব ঘরে তালা লাগিয়ে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, স্থানীয় শহীদুল, মকফুর, আলিমদ্দিনসহ একটি চক্র দলিল করিয়ে দেওয়ার কথা বলে বৃহস্পতিবার রাতে ২৭ জন ভূমিহীনকে ওই সব নতুন ঘরে তুলে দেন। বিষয়টি শুক্রবার সকালে জানাজানি হলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদরের ইউএনও ফাতেমা-তুজ-জোহরা ও ভোমরা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কান্তিলাল সরকার ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা এসে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী ও দখলকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের পরবর্তী কোটায় পর্যায়ক্রমে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দ্রুত মালামাল নিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন ইউএনও। ভূমিহীনেরা চলে যাওয়ার পরপরই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কান্তিলাল সরকার ওই সব ঘরে তালা লাগিয়ে দেন।

ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী বলেন, খালি ঘর দখলে কোনো টাকাপয়সা লেনদেনের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে ভূমিহীনদের সংখ্যা অনুযায়ী ঘর কম বরাদ্দ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর ইউএনও ফাতেমা-তুজ-জোহরা সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন, তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। চাহিদার তুলনায় প্রথম দফায় অনেক কম লোক ঘর পাচ্ছেন। যাঁদের নাম তালিকায় না থাকার পরও ঘর দখল করেছিলেন, তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অসহায় হলে পরবর্তী তালিকায় তাঁদের নামে ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।