পুরস্কার পাওয়া সেই মেয়ে এবার বাল্যবিবাহের শিকার

বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুলছাত্রীর বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে সাইকেল পুরস্কার পেয়েছিল মেয়েটি। সেই মেয়ে নিজেই এবার নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকার রাশেদুল ইসলাম ওরফে রনি নামের একজনের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। মেয়েটির বিয়ে ঠিক করেন সরিষাদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক খণ্ডকালীন শিক্ষক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শাকিল আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে তিনি বাড়ি ফিরে গেছেন। এরপর আর কোনো কিছু জানেন না।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে তৎকালীন মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ‘কন্যা সাহসিকা’ নামেরএকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সংগঠনটির মাধ্যমে মেয়েটি এক ছাত্রীর বাল্যবিবাহ ঠেকায়। এ জন্য ইউএনও তাকে পুরস্কার হিসেবে একটি বাইসাইকেল উপহার দেন।

আজ শুক্রবার সকালে মেয়েটির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বিবাহ উপলক্ষে বাড়ির আশপাশে নানা রঙের বাতি দিয়ে সাজানো। বাড়ির উঠানে শামিয়ানার পর্দা ও চেয়ার-টেবিল বসিয়ে অতিথিদের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল, যা এখনো রয়ে গেছে।
মেয়েটির মা বলেন, তাঁদের সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে। ছেলে বিয়ে করেছেন। আর এক মেয়ে ছোট। তাঁর মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীন বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে সাইকেল পুরস্কার পেয়েছিল। মেয়েটিকে তার শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের বিয়ে তো দেওয়াই লাগব। এ জন্য কাজির মাধ্যমে বিয়্যা দিয়্যা দিছি।’

মেয়েটির বিয়ে নিবন্ধন করা কাজী মোসলেম উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ (পুরোনো বহুরিয়া ইউনিয়ন) থেকে দেওয়া একটি জন্মসনদের ভিত্তিতে তিনি নিবন্ধন করেছেন। তিনি সনদটি দেখান, যা হাতে লেখা। সনদের নম্বরটি (২০০২৯৩১৬৬২৩০৩০১১৮) অনলাইনে যাচাই করলে তা পাওয়া যায়নি।

মির্জাপুরের তৎকালীন ইউএনও ইসরাত সাদমীন বর্তমানে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে কর্মরত আছেন। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ রকম এক প্রতিভাবান মেয়ে অকালেই ঝরে যাচ্ছে। ওর সামনে অনেক সময়। ওর মা-বাবার বিষয়টা বোঝা উচিত ছিল।

বাল্যবিবাহ বন্ধে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে বলে জানান মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হোসেন।তিনি বলেন, যে জন্মসনদের মাধ্যমে বিবাহ হয়েছে, তা ভুয়া প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।